কেউ আঁকছে, কেউ কম্পিউটার ঘাঁটছে, কেউ বা আবার মন দিয়ে পড়াশুনা করছে। তিন বছরের শিশু থেকে ১৮ বছরের তরুণ-তরুণী— সবার কাছেই তারাতলা ‘নবদিশা’ এক নতুন দিগন্ত। নবদিশা আসলে ‘নন ফরমাল স্কুল’ বা ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়’। এখানে স্কুলের মত বাঁধাধরা ছকে কোনও পঠন-পাঠন হয় না। তবু এই ‘নন ফরমাল স্কুল’ থেকেই দরিদ্র, অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পেয়ে থাকে শিক্ষা সহযোগিতা ও পরবর্তী জীবনে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ‘স্কিল ডেভলপমেন্টে’র সুবিধা। এই নবদিশা হল কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশ ইউনিটের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় এইরকম ‘নন ফরমাল স্কুলগুলি চালানো হয়। কলকাতার প্রায় প্রতি থানা এলাকাতেই একটি করে নবদিশা আছে। কিন্তু তার মধ্যে নজরকাড়া তারাতলা নবদিশা। কারণ এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়েছে ডিজিটাল ক্লাসরুম। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। কারণ ভাঙাচোরা জীর্ণপ্রায় নবদিশা দেখেই সাধারণত লোকের চোখ অভ্যস্ত। কিন্তু তারাতলা নবদিশা বর্তমানে ঝাঁ চকচকে।
কিভাবে হল এই অসাধ্যসাধন? এই প্রশ্নের উত্তরে তারাতলা নবদিশার প্রিন্সিপাল সোমা সাহা জানান, ‘সবটাই হয়েছে তারাতলা থানার ওসির সাহায্যে।’ তিনি আরও জানান, যখনই নবদিশার কোনও কিছু প্রয়োজন হয়, তা ওসি সুশান্ত কুণ্ডুকে জানালে তিনি ব্যবস্থা করে দেন।’ তারাতলা থানা সূত্রের খবর, ওসি সুশান্ত কুন্ডু বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে সাহায্য নিয়ে দারিদ্র্যের অন্ধকারে ডুবে থাকা শিশু ও তরুণ-তরুণীদের জন্য তৈরি নবদিশাকে নব কলবরে সাজিয়েছেন। ডিজিটাল ক্লাসরুম থেকে শুরু করে পয়ঃপ্রণালী, খাবার জলের ব্যবস্থা— সব কিছুই হয়েছে তারাতলা থানার উদ্যোগে। বর্তমানে এখানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১৪৫। কিন্তু প্রথম দিকে এই অবস্থা ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করার জন্য নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা। এখানে এলে দু তিন দিন অন্তর ছাত্রছাত্রীরা পায় কেক, চকলেট, বিস্কুট, ফ্রুট জুস।
কিন্তু তারাতলা নবদিশায় কী পদ্ধতিতে পড়াশুনা হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে নবদিশার প্রিন্সিপ্যাল সোমাদেবী জানালেন, টিএলএম বা ‘টিচিং লার্নিং মেথড’-এ এখানে পড়াশোনা করানো হয়। এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা মূলত সরকারি স্কুলে পড়ে। তারপর আমাদের কাছে আসে শিক্ষায় সহযোগিতা পেতে। প্রাথমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তৈরি করা হয় এবং তরুণ বা তরুণীদের জন্য পরবর্তীতে চাকরি জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আওতায় ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’-এর ওপর জোর দেওয়া হয় এখানে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স, জলের বোতল ইত্যাদিও পেয়ে থাকে। নবদিশায় না আছে স্কুলের মত কড়া পঠন পাঠন, না আছে বকাঝকা। তাই কিছুটা সময় পড়াশুনার সঙ্গে আঁকা, কম্পিউটার সব নিয়ে মেতে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। চলতি মাসের ৭ মে তারাতলা নবদিশার সংস্কারের পর নতুন করে উদ্বোধন হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের অ্যাডিশনাল সিপি সন্তোষ পান্ডে, সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশনের ডিসি রাহুল দে, তারাতলা থানার ওসি সুশান্ত কুণ্ডু সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। এক কথায় বলতে গেলে তারাতলা নবদিশা এখন দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একমুঠো খুশি, একমুঠো আনন্দ।