ভারত যেমন পহেলগামের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করছে, তখন পড়শি দেশ বাংলাদেশও নির্বাচন ত্বরান্বিত করার কাজে সেখানকার তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল। নির্বাচন নিয়ে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রবাসে বেশ কিছুদিন থাকার পর সম্প্রতি ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। বিএনপি ও তার দোসর জামায়াত ইসলামি— এই দুই দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনূস সরকারকে বলা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন করতে। কিন্তু খান সাহেবের মতিগতি দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি বিএনপি’র কথামতো দেশে নির্বাচনের ডাক দেবেন। ইউনূস খান অত সহজে গদি ছাড়বেন বলে মনে হয় না। অতীতে তিনি দেশের বিভিন্ন সংস্থায় শীর্ষপদে থেকে পদ তাড়াতাড়ি ছাড়তে চাননি। তা নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে, বাংলাদেশ সরকার চিনের পাশে থাকবে বলে খান সাহেব বেজিংয়ের শীর্ষকর্তাদের আশ্বাস দিয়েছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে তাঁর বাংলাদেশে নির্বাচন করার কাজে মন নেই। দিল্লির সাউথ ব্লক বাংলাদেশের এই ভূমিকার দিকে নজর রাখ্ছে। ইতিমধ্যেই বেজিং বাংলাদেশে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের প্রারম্ভিক কাজ শুরু করেছে। চিন বাংলাদেশ সরকারকে বলেছে এই হাসপাতাল চালু হলে বাংলাদেশের জটিল রোগে আক্রান্তদের ভারতে যেতে হবে না চিকিৎসার জন্য।
বাংলাদেশের পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ৩০০। বিএনপি জামায়াত ইসলামির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে লড়বে। ঠিক হয়েছে বিএনপি ২০০ আসনে তাদের প্রার্থী দেবে আর জামায়াত ইসলামি লড়বে ৫০ আসনে। অন্যান্য ছোট দলগুলির মধ্যে বাকি ৫০ আসন বণ্টন করা হবে। তবে এই আসন ভাগাভাগির বিষয়টা এখন প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্বতন শাসক দল আওয়ামি লীগকে ভেটে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে— যাতে আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। তবে আওয়ামি লিগ সরকারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন এবং কিচুসংখ্যক আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মী বাংলাদেশেই আত্মগোপন করে রয়েছেন, তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। যাঁরা নিষ্কলঙ্ক আওয়ামিলিগ নেতা-কর্মী আছেন, তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনও বাধা নেই। আওয়ামি লিগের প্রচুরসংখ্যক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে গণ অভ্যুত্থানকালে। তাছাড়া এই দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রেলিগকে অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লিগের যেসব নেতা এখন প্রকাশ্যে বাংলাদেশে চলাফেরা করছেন, তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনের কিছুই এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি— তারা অপেক্ষা করে আছেন জল কোন দিকে গড়ায় তা দেখতে। বাংলাদেশের নির্বাচন যে সময়েই হোক, বিএনপি এবং তার শরিক জামায়াত ইসলামি যে ক্ষমতা দখল করবে, সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত।
ইতিমধ্যে জামায়াত নেতারা প্স্তাব দিয়েছে তদারকি সরকারের প্রধান যদি তাঁদের দাবিমতো নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন, তাহলে তাঁকে খুশিকরার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদে বসানো হবে। কিন্তু জামায়াতেদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন বিএনপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন খালেদাপুত্র তারেক রহমান। এ ব্যাপারে বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামি মতৈক্যে আসতে পারেনি। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করে বাংলাদেশে তদারকি সরকার বিএনপি’র কথামতো নির্বাচনের ডাক দেবে, এই আশা করা যায় না। কারণ সংস্কারের কাজ তো এখনও সম্পূর্ণ হয়নি— তাছাড়া বাংলাদেশ এখন তীব্র আর্থিক সংকটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য আকাশছোঁয়া—বলা যায় তা সাধারণের নাগালের বাইরে। তাছাড়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেবে, তা এখনই বলা যায় না। একটি সূত্র মনে করে খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার পর তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ। তাঁর সঙ্গে তদারকি সরকারের প্রধানের আসন্ন বৈঠকের কথাও শোনা যাচ্ছে। এই বৈঠক বাস্তবে রূপ নিলে খালেদা নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যায় না। নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামা বাজার পর বাংলাদেশে ভারত বিরোধী অপপ্রচার কিছুটা কমেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তও মোটামুটি শান্ত। সীমান্তের যে অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই এবং নদী ও জলবেষ্টিত, সেখান দিয়ে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে— তবে আগের মতো সংখ্যায় বেশি নয়। বাংলাদেশ এখন তাকিয়ে আছে ভারত পহেলগামের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী প্রত্যাঘাত নেয় তার দিকে। চিন পাকিস্তানের বড় বন্ধু, সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে যদি ভারতের যুদ্ধ লাগে, তখন বেজিং সৈন দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য না করলেও, অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করবে— এ ব্যাপারে বেজিং সরকারের শীর্ষকর্তারা পাকিস্তানকে আশ্বাস দিয়েছে।
অপরদিকে আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। সন্ত্রাসবাদকে যে পাকিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে— সে ব্যাপারে ভারত ও আমেরিকা একমত। এই সন্ত্রাসবাদকে সমূলে নির্মূল করতে হবে।
সুতরাং ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের দেশে নির্বাচন করার কথা মাথায় নেই। ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায় কোন দিকে শেষ পর্যন্ত গড়ায়, সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশের তদারকি সরকার।