• facebook
  • twitter
Thursday, 24 April, 2025

স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপুর জামিনে চিন্তিত নির্যাতিতার পরিবার

আদালতের এই নির্দেশের পরই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে নির্যাতিতার বাবা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘আসারামকে যখন জেলে পাঠানো হল, আমরা জিতেছিলাম।

ফাইল চিত্র

ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত আসারাম বাপু ফের জামিন পেতেই ভয়ে সিঁটিয়ে ধর্ষিতার পরিবার। তাঁরা যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, আসারাম যেকোনও দিন তাঁদের পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নেবেন। তাঁর সমর্থকেরা পরিবারের ক্ষতি করতে পারেন। কী ভাবে ধর্ষক বার বার জামিন পাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ধর্ষিতার বাবা।

প্রসঙ্গত যোধপুর ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত গুরু আসারাম বাপু। তাঁকে আবার অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে গুজরাত আদালত। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ২০১৩ সালে জোধপুরের আশ্রমে উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের তরুণীকে ধর্ষণ করেন আসারাম। সেই সময়ে নির্যাতিতার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এই ঘটনায় ২০১৮ সালে আসারামকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। এই অপরাধের জন্য তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন তিনি। সেই ইস্যুতে সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার তিনি অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ৮৬ বছরের বৃদ্ধ এই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছিল। আগামী ৩১ মার্চ তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আসারামের আইনজীবী গুজরাত হাইকোর্টে আবার আবেদন জানিয়েছেন, যাতে অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে দেওয়া যায়। শুক্রবার সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।

আদালতের এই নির্দেশের পরই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে নির্যাতিতার বাবা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘আসারামকে যখন জেলে পাঠানো হল, আমরা জিতেছিলাম। কিন্তু এখন তো উনি সবাইকে হাত করে নিয়েছেন। আদালত বার বার ওঁর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করছে, এতে আমি স্তম্ভিত। প্রথমে সাত দিন, তার পর ১২ দিন, তার পর আড়াই মাস। আর এখন তিন মাস!’

অভিযোগ উঠছে, আসারাম জেলের বাইরে বেরনোর পর থেকেই তাঁর সমর্থকরা দাবি করেছেন, তিনি আর জেলে ঢুকবেন না। সেই কথাই সত্যি হচ্ছে, আক্ষেপ নির্যাতিতার বাবার। তাঁর কথায়, ‘উনি তো যোধপুর থেকে ইনদওর, উজ্জয়িনী থেকে সুরাত— ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করছেন। এটা কী ধরনের অসুস্থতা? আমাদের পরিবারের বিপদ এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। যখন তখন উনি আমাদের সঙ্গে যা খুশি করে ফেলতে পারেন। ঈশ্বরই আমাদের ভরসা।’

যদিও নির্যাতিতার পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়েছে প্রশাসন। এসপি রাজেশ দ্বিবেদী বলেন, নির্যাতিতার বাড়িতে একজন নিরাপত্তারক্ষী ও দু’জন বন্দুকধারী পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। বাড়িতে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। স্থানীয় থানাকেও প্রতিনিয়ত ওই বাড়ির দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আসারাম এবং তাঁর অনুগামীদের থেকে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে পরিবার।

নির্যাতিতার বাবা নিজেদের আইনজীবীর প্রতিও আস্থা হারিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, আইনজীবী তাঁদের প্রতারণা করেছেন। তিনি আসারামের জামিনের বিরুদ্ধে আবেদনই জানাননি। বলেন, ‘আমরা বার বার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে কোনও কথাই বললেন না। সেই কারণেই আদালত জামিন দিয়ে দিয়েছে। আমরা সমস্ত কাগজে সই করে দিয়েছিলাম। আমাদের আইনজীবী শুধু আমাদের ঘোরালেন। কাজের কাজ কিছুই করলেন না। উনি আমাদের প্রতারণা করলেন।’

উল্লেখ্য, আসারামের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। তাঁর হৃদ্‌‌যন্ত্র এবং কিডনিতে সমস্যা আছে। যোধপুরের একটি আয়ুর্বেদিক সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। শেষ হতে আরও তিন মাস লাগবে। সেই চিকিৎসার প্রয়োজনেই আসারামের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর হয়েছে।