• facebook
  • twitter
Thursday, 13 February, 2025

যোগী সরকারের ব্যর্থতায় মহাকুম্ভের দুর্ঘটনা

সাধু-সাধ্বীরাও অনেকে তুলেছেন এই প্রশ্ন

মহাকুম্ভে ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র

সৈয়দ হাসমত জালাল

বিজেপির হিন্দুত্ববাদের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর বিগত কয়েক বছরের কাজকর্ম বিচার করলেই বোঝা যায়, নরেন্দ্র মোদীর পর প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসাই তাঁর লক্ষ্য। আর তাই বিজেপির প্রথম সারির অন্যান্য নেতাদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় তাঁর কোনও খামতি দেখা যায় না। এবার এই মহাকুম্ভ তাঁর সামনে এনে দিয়েছিল এক সুবর্ণ সুযোগ। এ ব্যাপারে বিপুল আয়োজন তো ছিলই, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ছিল আয়োজনের প্রচার।

এই আয়োজনের পেছনে খরচ হয়েছিল ৭৫২৫ হাজার কোটি, জানিয়েছিল যোগী সরকার। বায়ো-টয়লেট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু থেকে ভিভিআইপিদের থাকা এবং তাঁদের পুণ্যস্নানের বিশেষ ব্যবস্থা করে দেওয়া, এসবও ছিল সেই আয়োজনে।

২৮ জানুয়ারি যোগী আদিত্যনাথ নিজেই জানিয়েছিলেন, আগের দিন সাড়ে পাঁচ কোটি পুণ্যার্থীরা এসেছিলেন, আর ওইদিন প্রায় দশ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে। অর্থাৎ বোঝাই যায়, এমন সুবিশাল ভিড়ের কথা কথা জানত প্রশাসন। তাহলে পদপিষ্ট হওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে, প্রশাসন কেন আরও সতর্ক হলো না, এ প্রশ্ন তো উঠবেই। ২৮ তারিখ ছিল মঙ্গলবার। ওই মঙ্গলবারই গভীর রাতে ঘটে পদপিষ্টের মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা। ইংরেজি তারিখ মতে তা ২৯ তারিখ এবং বুধবার। এই বুধবার সকালেও এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি শোনা যায়নি যোগী আদিত্যনাথ বা তাঁর প্রশাসনের। এক অদ্ভুত নীরবতার পর বিকেলের শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়, পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের এবং আহত হয়েছেন ৬০ জন। বেসরকারি মতে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির দলের মধ্যে থেকেও। ভিড় সামলাতে সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়নি কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। সাধু-সাধ্বীরাও অনেকে তুলেছেন এই প্রশ্ন। পঞ্চায়েতি আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর প্রেমানন্দ পুরীও অভিযোগ করেছেন, কেন সেনাবাহিনীর হাতে দায়িত্ব দেওয়া হল না? তাঁর মতে, এত মানুষের ভিড় সামলানোর ক্ষমতা উত্তর প্রদেশের পুলিশের নেই। তিনি স্পষ্টই দায়ী করেছেন প্রশাসনের ব্যর্থতাকে। তাঁর মতো অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ পুণ্যার্থীদের কথা না ভেবে প্রশাসন ব্যস্ত ছিল ভিভিআইপিদের দেখাশোনায়।

‘মেলা’ শব্দের অর্থ ‘মিলন’, আমরা জানি। এই কুম্ভমেলার প্রচারে কোটি কোটি লোকের সমাগমকে বলা হয়েছিল ভারতের এক মহাসম্মিলন। এই পুণ্যস্নানের পেছনে যে কোটি কোটি মানুষের সুখ ও আরাম ত্যাগ করার সঙ্গে মিশে থাকে বিপুল কায়িক পরিশ্রম ও ক্লেশ, তাকে তুচ্ছ করেই তো তাঁরা এই মহামিলনে, এই সঙ্গমস্থলে যান পুণ্যার্জনের আশায়। এর পেছনে থাকে সুদীর্ঘ বছরের লালিত আধ্যাত্মিক বোধ ও বিশ্বাস।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়