সরকারকে ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভয় দেখানো যাবে না’, স্পষ্ট বার্তা দিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। মঙ্গলবার পহেলগামে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে। পোস্টে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে বলা হয়েছে, ‘আমি আজ পহেলগামে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছি।’ এটি কেবল একটি প্রশাসনিক অনুশীলন ছিল না, তবে একটি স্পষ্ট বার্তা ছিল, আমরা সন্ত্রাসের কাপুরুষোচিত কাজে ভয় পাই না।’ আরও বলা হয়েছে, ‘শান্তির বিপক্ষে যারা, তারা কখনওই আমাদের সংকল্পকে নিশ্চল করতে করবে না। জম্মু ও কাশ্মীর দৃঢ়, শক্তিশালী এবং ভয়হীন থাকবে।’
এদিন পহেলগামে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের মন্ত্রিসভা এবং শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক ও পুলিশ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। উপত্যকার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা দিতেই এই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের পর পহেলগাম নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আতঙ্ক আর ভয়। সেই ভয় ও আতঙ্ক কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা নাসির আসলাম ওয়ানি বলেছেন, ‘আমরাই যদি পহেলগামের এই জায়গাগুলিতে না যাই, তাহলে আর কে যাবে? এই সভার উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, আমরা পহেলগামের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখান থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করব। দ্বিতীয়ত, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যে পহেলগামে যাচ্ছি, সেটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। এটা মানুষের মনে আরও আস্থা বাড়াবে।’ একজন আধিকারিক বলেছেন, ‘আশা করব, এই সভার পর পর্যটকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।উপত্যকায় ফের ঘুরতে যাওয়া নিরাপদ বলে মনে করবেন তাঁরা।’
২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর সেখানকার উপর আস্থা হারিয়েছেন পর্যটকরা। পর্যটকদের কাশ্মীরে আসার জন্য উৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে ফের আশার আলো ফেরাতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার গুলমার্গে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকে প্রশাসনিক সচিব এবং প্রশাসনের অন্যান্য উচ্চ পদস্থ অফিসারারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগামে ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। সেই জঙ্গিদের চিহ্নিত করা গেলেও এখনও তারা অধরা। পহেলগামের সেই ঘটনা শুধু নিরাপত্তাই নয়, কাশ্মীরে পর্যটনের ক্ষেত্রে যে আস্থার ভিত গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছিল তাও চুরমার করে দিয়েছে। পর্যটকদের মধ্যে সেই আস্থা ফেরাতেই সাহসী পদক্ষেপ কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর।
সরকারি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা মঙ্গলবারের বৈঠকে পহেলগামের স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পর্যটন পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে কী কী করণীয় তার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যাগুলিও চিহ্নিত করা হয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ওমর আবদুল্লার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই ধরনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে— এক, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উদ্দেশে বার্তা, কাশ্মীর নিরাপদ এবং তারা ফিরে আসতে পারেন। এবং দুই, স্থানীয় মানুষকে আশ্বস্ত করা, যাতে তারা আবার পর্যটন ব্যবসার পুনর্জন্ম ঘটাতে পারেন।
ওমর বিশ্বাস করেন যে সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রচেষ্টা জনসাধারণের ভয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে, নিরাপত্তা ও আস্থা জাগিয়ে তুলবে। কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটন আবার তার স্বাভাবিক পথে চলবে। পাশাপাশি অর্থনীতিও আবার চাঙ্গা হবে।