শুরু হয়েছে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জোরালোভাবে সংসদে তুলে ধরতে ঐক্যবদ্ধ ইন্ডিয়া মঞ্চ। কংগ্রেসের পাশাপাশি ন্যাশনাল কনফারেন্সও একই দাবিতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে এই দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নিয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা সাফ জানিয়েছেন, ‘কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে আর অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে ও সুপ্রিম কোর্টে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এখনও পূরণ করা হয়নি। রাজ্যের মর্যাদা কাশ্মীরিদের অধিকার। এটা ভিক্ষা নয়। ‘হাইব্রিড মডেল’ বলে একটি কথা চালু করেছে কেন্দ্র। এর অর্থ হলো, আইনশৃঙ্খলা কেন্দ্রের হাতে রেখে বাকি রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। এই দেশে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও মডেল চালু নেই। নির্বাচিত সরকারই নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলাতে প্রস্তুত এবং তা করেছে। কেন্দ্রশাসিত মডেলে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, রাজ্যের হাতে ক্ষমতা থাকাকালীন তা অনেক নিয়ন্ত্রিত ছিল। যদি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মডেল এতই ভালো হয়, তাহলে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে তা করা হোক। শুধু জম্মু-কাশ্মীরেই কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার মানে নীরব থাকা নয়। যেখানে ভুল, সেখানেই প্রতিবাদ। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
Advertisement
জম্মু-কাশ্মীরকে ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে আইন প্রণয়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাহুল গান্ধি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। সংসদের বাদল অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত বিল আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। লোকসভা ও রাজ্যসভার এই দুই বিরোধী দলনেতা একই সঙ্গে কেন্দ্রশাসিত লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে।
যৌথ স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, গত পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবি অত্যন্ত বৈধ এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অততে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু স্বাধীনোত্তর ভারতে জম্মু-কাশ্মীরের মতো ঘটনার নজির নেই। এই প্রথমবার একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নামিয়ে আনা হলো।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৯ মে ভুবনেশ্বরে এক সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছিলেন, রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরে এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদী ফের বলেছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা হবে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের সামনে ৩৭০ ধারার বিরোধিতায় একই রকম আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বলা হয়েছিল যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো হবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়। এর পরিবর্তে জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
যুক্তি হিসেবে কেন্দ্রের দাবি ছিল এর ফলে ওখানকার সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। এর পাশাপাশি প্রভূত উন্নয়ন ঘটবে ওই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। কেন্দ্রের এই একতরফা এবং সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা প্রথম থেকেই করে আসছিল বিরোধীরা। বাস্তবেও সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হওয়ার বদলে উল্টে বেড়ে গিয়েছে। সীমান্ত সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটে চলেছে।
সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের উপজাতি অঞ্চলের প্রশাসন সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। ষষ্ঠ তফসিলে স্বায়ত্তশাসিত সত্তা হিসেবে কিছু উপজাতি অঞ্চলের প্রশাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাদাখ অঞ্চলটিকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের উন্নয়নমূলক এবং রাজনৈতিক আকাঙক্ষা পূরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে এবং একই সঙ্গে তাদের অধিকার, ভূমি ও পরিচয় রক্ষা করবে।
Advertisement



