এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতা। শনিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু এবারও হাতকড়া ও শিকল পরিয়েই তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ। গত সপ্তাহে ১০৪ জন ভারতীয়কে নিয়ে আমেরিকার একটি সামরিক বিমান অমৃতসরে নেমেছিল। দাবি করা হয়েছিল, পায়ে-কোমরে চেন বেঁধে তাঁদের তোলা হয়েছিল বিমানে। আমেরিকার তরফে দেওয়া একটি ভিডিওতেও একই ছবি ধরা পড়েছে। সেই নিয়ে শুরু হয়েছিলো বিতর্ক। এবারও সেই ছবির কোনো পরিবর্তন ঘটল না। শনিবার রাতে আমেরিকা থেকে ফেরা এক ভারতীয় নাগরিক করেছেন, তাঁদের হাতকড়া পরিয়েই বিমানে নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের হাত পা বাঁধা ছিলো শিকলে।
প্রথম দফায় ট্রাম্পের পাঠানো সামরিক বিমানে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে, শিকলে বেঁধে নিয়ে আসা নিয়ে রীতিমত হইচই শুরু হয়ে যায়। এই ভাবে কেন অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা, সংসদেও তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই বিতর্কের মধ্যেই দু’দিনের মার্কিন সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে উড়ে যান মোদী। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকও করেন হোয়াইট হাউসে। এই বৈঠকের পর মনে করা হয়েছিল এবারে হয়ত হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরানো হবে না অবৈধ অভিবাসীদের। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম সমাজমাধ্যমে সেই কৌতূহল উস্কে দিয়ে লেখেন, ‘এটি ভারতীয় কূটনীতির পরীক্ষা।’ কিন্তু বাস্তবে মোদী সরকারের কূটনীতি যে সফল হয়নি তা অবৈধ অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে আনার ঘটনায় পরিষ্কার।
আগে থেকে জানা গিয়েছিল মার্কিন বিমান বাহিনীর সি-১৭ মডেলের গ্লোবমাস্টার নামের প্লেনে করে ১১৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু পরে দ্বিতীয় ধাপের জন্য ১১৬ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এই সমস্ত অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ৬৫জন পাঞ্জাবের, ৩৩জন হরিয়ানার, ৮জন গুজরাতের, ২জন করে উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের। ১ জন করে হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা দেরিতেই পৌঁছয় মার্কিন সামরিক বিমান। সেই সময় অমৃতসর বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবনীত সিং বিট্টু। উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানও। অবৈধ অভিবাসীরা অমৃতসর বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পর প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। দ্বিতীয় দফায় দেশে ফেরা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিলেন পাঞ্জাবের বাসিন্দা। রবিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পুলিশের গাড়িতে করে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। হরিয়ানা সরকারও সে রাজ্যের বাসিন্দাদের ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে।
তবে এই সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের কীভাবে ফেরানো হয়েছে সেই বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে রবিবার সংবাদমাধ্যমে দলজিৎ সিংহ নামে এক অবৈধ অভিবাসী দাবি করেছেন, তাঁদের হাতকড়া এবং শিকল পরিয়েই বিমানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনকি তাদের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রথম দফায় হাতকড়া-শিকল বিতর্কের মাঝে অবশ্য বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছিলেন, আমেরিকার নিজস্ব আইন অনুসারেই হাতকড়া-শিকল পরানো হয় অবৈধবাসীদের। তবে মহিলা ও শিশুদের শিকল-হাতকড়া পরানো হয়নি বলেও সেই সময়ে জানিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী।
অন্যদিকে ভারতে ফেরত আসা এই অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ২ জন ছিলেন খুনের মামলায় অভিযুক্ত বলে জানা গিয়েছে। পাঞ্জাবের পাতিয়ালা জেলার রাজপুরার বাসিন্দা ওই দুই তরুণের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে খুনের মামলা রুজু হয়েছিল। সন্দীপ সিংহ ওরফে সানি এবং প্রদীপ সিংহ নামে ওই দুই তরুণ অমৃতসর বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।