কোনওরকম প্ররোচনায় পা না দিয়ে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শনিবার এক্স হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘সব ধর্মের সকল মানুষের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না। দাঙ্গা যাঁরা করছেন, তাঁরা সমাজের ক্ষতি করছেন।’
কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও এই বিক্ষোভ হিংসার রুপ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমাজ মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এদিন স্পষ্ট জানান, এই আইন রাজ্য সরকার করেনি, এটি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রের তৈরি আইন। তাঁর কথায়, ‘মনে রাখবেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন, সেই আইন আমরা করিনি। আইনটি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই এর উত্তর চাইতে হবে কেন্দ্রের কাছে। আমরা এই আইনকে সমর্থন করি না। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগু হবে না। তাহলে দাঙ্গা কিসের ?’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর এক্স হ্যান্ডলে আরও বলেন, দাঙ্গায় যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও রকম হিংসাত্মক কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘যাঁরা এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছেন তাঁদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি। সকলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন-এই আমার আবেদন।’
কেন্দ্রের ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও অশান্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের জেরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের জেরে রেলের সম্পত্তিতে চলেছে বেপরোয়া ভাঙচুর। শনিবারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কোনওভাবেই আইন নিজের হাতে নেওয়া চলবে না। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সকলের থাকলেও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সংশোধিত ওয়াকফ আইন মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে এবং তাদের সম্পত্তির ওপর সরকার অনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, মালদার ইংলিশ বাজার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও ডায়মন্ড হারবার এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় যানবাহন আটকে দেন, বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয় এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে সংযত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।