আজকালকার দিনে অনেকেরই হাত কাঁপার সমস্যা রয়েছে। মাংসপেশির অনিয়ন্ত্রিত কম্পনের ফলেই হাত কাঁপে। অকারণে হাত কাঁপাকে বলা হয় ট্রেমর। ক্রমাগত হাত কাঁপলে দৈনন্দিন নানা কাজকর্ম করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাত কাঁপার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। সেগুলি হল – ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা, অ্যাসেনসিয়াল ট্রেমর এবং পারকিনসনস রোগ। দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের কারণেও হাত কাঁপতে পারে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পারকিনসনস একটি বয়সজনিত স্নায়ুরোগ। এই রোগে আক্রান্তদের হাত কাঁপার পাশাপাশি হাঁটাচলাতেও প্রভাব পড়ে। চলাচলের গতি ধীর হয়ে যায়, হাত-পায়ে আড়ষ্ট ভাব আসে। অ্যাসেনসিয়াল ট্রেমর একটি বংশগত রোগ। এক্ষেত্রে হাত-পা কাঁপার সঙ্গে রোগীর মাথাও কাঁপে। বিভিন্ন ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হাত কাঁপতে পারে। শ্বাসকষ্টের ওষুধ খেলেও হাত কাঁপতে পারে।
Advertisement
রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলেও রোগীর হাত কাঁপে। থাইরয়েড বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে বলে হাইপারথাইরয়েডিজম। এই ক্ষেত্রে রোগীর আরও কিছু উপসর্গও থাকে। যেমন: ওজন কমে যাওয়া, ডায়েরিয়া, গরম লাগা বা ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি। মস্তিষ্কে সেরিবেলামের সমস্যার কারণেও হাত কাঁপতে পারে। হাইপোথাইরয়েড রোগে থাইরক্সিন হরমোন বড়ি খাওয়ার মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলেও হাত কাঁপা শুরু হতে পারে।
Advertisement
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাত কাঁপার সমস্যার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। হাঁত কাপার চিকিৎসার শুরুতেই দেখতে হবে, কী কারণে হাত কাঁপছে। সবার আগে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি দেখতে হবে। যদি দেখা যা, কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হাত কাঁপছে, সেক্ষেত্রে সবার আগে সেই ওষুধ বন্ধ করতে হবে। রোগী পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত হলে একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
থাইরইয়েড হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হাত কাঁপলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কয়েকটি ওষুধ হাত-পা ও মাথা কাঁপার চিকিৎসায় কার্যকর। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া সেগুলি খাওয়া উচিত নয়। যেসব রোগী ওষুধে ভালো হয় না, তাঁদের জন্য অপারেশনের ব্যবস্থাও আছে।
দৈনন্দিন জীবনে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেও হাত কাঁপার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন ও ভালো ঘুম, হাত কাঁপার অন্যতম চিকিৎসা। রোগীকে পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। মানসিক চাপ এড়িয়ে চলতে হবে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। সর্বোপরি মানসিকভাবেও পরিবারের সদস্যদের রোগীর পাশে থেকে মনোবল জোগাতে হবে।
Advertisement



