• facebook
  • twitter
Friday, 9 May, 2025

যেসব ফুলে বিষ আছে

এটি মধুতে ভরপুর হলেও এ ফুল গাছের পাতা কল্পনাতীত বিষাক্ত

ফাইল চিত্র

কালীপদ চক্রবর্তী

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা তো জানোই, আমরা সবাই ফুল খুব ভালবাসি। ফুল হল সৌন্দর্যের প্রতীক। আমরা পূজা থেকে শুরু করে ভালবাসা জানানো বা শেষযাত্রায়ও ফুল ব্যবহার করে থাকি। প্রজাপতি, মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। কিন্তু আমাদের এই পৃথিবীতে এমন কিছু ফুল আছে, যেগুলোতে আছে তীব্র বিষ। না জেনে এসব ফুল বা ফুলগাছের পাতা খেয়ে ফেললে বা কোনোভাবে পেটের ভেতর চলে গেলে বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই কিছু ফুল সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকা উচিত এবং শিশুরা যাতে সেগুলো নিয়ে খেলা না করে সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। কারণ অসাবধানতাবশত যাতে বিপদ না ঘটে। আজ যেসব ফুলগুলোর কথা বলব সেগুলো সম্পর্কে খুব সাবধান থাকবে। ওগুলো নিয়ে খেলতে যাবে না। এ লেখাটির উদ্দেশ্য হল তোমাদের সাবধান করে দেওয়া।

উইস্টেরিয়া
এ ফুলগুলো দেখতে অনেকটা লম্বা ফুলের মালার মতো। মেয়েদের চুলের খোঁপায় প্রায়ই এগুলো শোভা পায়। গাঢ় বাদামি, হালকা গোলাপি রঙের এই ফুলগুলো ভয়ানক বিষাক্ত। দেখে এদের বোঝার উপায় নেই। অনেকেই ফুলটিকে নিরীহ ভেবে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বিষের প্রভাব ধীরে ধীরে হলেও শারীরিক বিপর্যয় ঘটাতে এর কোনও অবহেলা নেই। এদের বিষে বমি, ডাইরিয়ার সঙ্গে মাংসপেশিতেও টান পড়ে এবং রোগীকে চরম বিপদের মধ্যে পড়তে হয়।

এনথোরিয়াম
এ গাছের পাতাগুলো সাধারণত সবুজ, লাল অথবা গোলাপি রঙের হয়। এর পাতাগুলো ছোট ছোট হৃদয়ের আকৃতির হয়। দেখতে অপূর্ব সুন্দর এই পাতাবাহার গাছের পাতা অসম্ভব বিষাক্ত। আজকাল অনেকের ঘরের ফুলদানিতেও এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এর সৌন্দর্য অনায়াসেই সকলকে আকর্ষিত করে। ভুলেও যদি কোনোক্রমে মুখে চলে যায় তবে বেদনাদায়ক জ্বালাপোড়া অনুভূতি হবে। মুখের ভেতরে ফোস্কা পড়ে যাবে। গলার আওয়াজ ভারি ও কর্কশ হয়ে যাবে। এর প্রভাব যদি বেশি হয় তবে খাবার চিবিয়ে খেতেও সমস্যা দেখা যায়।

ক্রিসেনথিমাম
হলুদ, কমলা রঙ ছাড়াও বিভিন্ন রঙের এই ফুলটি পাপড়ি মেলে দিলে মনে হয় টব ভর্তি রঙের হাসি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে সহজ করে একে ‘মাম ফ্লাওয়ার’ও বলে থাকেন। ক্রিসেনথিমাম প্রায় ১০০ থেকে ২০০ প্রজাতির হয়। এটি অন্যান্য ফুল থেকে কম বিষাক্ত। তবে ত্বকে ফুসকুড়ি থেকে বাঁচতে এ ফুলগাছটি নিয়ে ছেলেখেলা না করাই ভালো।

ফিকাস বেঞ্জামিনা
বেঞ্জামিন ট্রি হিসেবে পরিচিত এই গাছটিকে অনেকেই ছোট পাতার রাবার গাছ বলেও ভেবে থাকেন। অনেকে বলেন— ক্রন্দনকুমারী— ডুমুর গাছ। এর পাতায় দুধের মতো সাদা ও রসালো বিষ আছে। অনেকেই না জেনেই এ গাছটিকে বাড়িতে ছোট ছোট পাত্রে পাতাবাহারের মতো ব্যবহার করেন। এর বিষক্রিয়া যে কী ভয়ানক তা অনেকেই জানেন না। পাতার বিষে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক চুলকোতে থাকবে, বিষ ছড়িয়ে ত্বকের নিচে বাতাস জমে ফুলে গেছে বলে মনে হবে। অ্যালার্জি নিরোধক ওষুধ ব্যবহার করে চিকিৎসকেরা এর বিষক্রিয়া থামানোর চেষ্টা করেন।

রডোডেনড্রন
বাগানে এই সুন্দর প্রজাপতির মত ফুলটি দেখে অনেকেই খুব খুশি হন। দেখলে মনে হবে প্রজাপতির মত পাখনা মেলে আছে ফুলটি। এটি মধুতে ভরপুর হলেও এ ফুল গাছের পাতা কল্পনাতীত বিষাক্ত। এই গুল্মজাতীয় গাছের পাতা মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ পুড়ে যাবে, লালা ঝরতে শুরু করবে, বমি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয় চূড়ান্ত পর্যায়ে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে। এর বিষের প্রভাব এতই বেশি যে শীঘ্রই হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে কমে আসবে। দ্রুত ডাক্তারের কাছে না পৌঁছাতে পারলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে।

নারসিসাস
এটি সাদা এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে। অনেকে একে পিঁয়াজ ফুল বলে ভুল করে থাকেন। অপূর্ব সুন্দর দেখতে লাগে এটিকে। ড্যাফোডিল জাতীয় এ ফুলটি যতটা সুন্দর লাগে তার চেয়েও বেশি বিষাক্ত এটি। কোনোক্রমে ভুলবশত যদি এ ফুলটি কারও পেটে চলে যায় তবে তৎক্ষণাৎ তার দেহে বিষক্রিয়া ঘটবে। বমির উদ্রেক, মাংসপেশিতে টান-পড়া এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে।

উপরোক্ত ফুলগুলো ছাড়াও আরও বহু বিষাক্ত ফুল এবং গাছ আমাদের এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। তাই সাবধানতা পালন করা অবশ্যই কর্তব্য।