• facebook
  • twitter
Monday, 28 July, 2025

লড়াই তীব্রতর হচ্ছে

জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে মানুষ এই পথে নামতে বাধ্য হয়েছে। একটু একটু করে দানা বঁধছে মানুষের ক্ষোভ। সংবিধান, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার আন্দোলন ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

নিজস্ব চিত্র

তৃতীয়বার ক্ষমতায় বসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার পুঁজিপতিদের স্বার্থে শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে আরও তীব্র আক্রমণের পথে শ্রমকোড চালু করতে অগ্রসর হচ্ছে। গত ১৫০ বছর ধরে লড়াই সংগ্রাম করে অর্জিত অধিকারগুলি বাতিল করে পুঁজিপতিদের শোষণ তীব্র করে মুনাফা বৃদ্ধি করতেই তৈরি করা হয়েছে শ্রমকোড। দেশে শ্রমকোড চালু হলে প্রথমেই দেশের সংগঠিত ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ শ্রমিক শ্রম আইন সুরক্ষার বাইরে চলে যাবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির অধিকার, আট ঘণ্টা কাজের অধিকার, স্থায়ী কাজে স্থায়ী চাকরি, সমকাজে সমবেতন (সুপ্রিম কোর্টের রায়), শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার অধিকার আগামী দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন আইনে শ্রম দপ্তরের ভূমিকা লঘু করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মালিকদের অত্যাচার ও শোষণ বাড়বে। কারখানার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা, নতুন ইউনিয়ন গঠন করা, রেজিস্ট্রেশন করা, ধর্মঘট তথা সভা-সমাবেশ করার অধিকার খর্ব করা হয়েছে নতুন শ্রমকোডে।
বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত মালিক যারা বেআইনিভাবে কলকারখানা চালাচ্ছে, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে, শ্রম আইন ভঙ্গ করছে—নতুন শ্রমকোডের মাধ্যমে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৩০০ জন অপরাধী পুঁজিপতিদের জেল-জরিমানা থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি ঋণখেলাপি দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করেছে। অথচ গত ১২ বছরে সারা দেশে আমাদের অন্নদাতা লক্ষ লক্ষ কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে যে আত্মহত্যা করেছে তাদের ঋণ মকুব করা হয়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষকদের ফসলের লাভজনক দামের আইন করেনি মোদী সরকার। দেশকে আত্মঘাতী পথে ঠেলে দিচ্ছে মোদী পরিচালিত এই সরকার।
একই সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি হিন্দুত্বের নামে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টিকারী হিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি করে দেশজুড়ে মানুষের ঐক্য ও সম্প্রীতির বাতাবরণ ধ্বংসের চেষ্টা করে চলেছে। দেশকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। বিজেপি-আরএসএসের ক্রমবর্ধমান স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নীতি, সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানুষের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন প্রচার মাধ্যম, দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি, দেশের সংবিধানে প্রদত্ত প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বাসস্থান, মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। বিরোধী দল, মত, স্বাধীন সাংবাদিকতা, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সবই আক্রান্ত, বিপদাপন্ন। বিরোধীদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে ইউএপিএ বিনা বিচারে আটক আইন, সিবিআই, ইডি সহ বিভিন্ন সেন্ট্রাল এজেন্সিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংসদ ও দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে বিজেপি-আরএসএস দেশের স্বাধীন বিদেশনীতি জলাঞ্জলি দিয়েছে। আত্মসমর্পণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র ইরানের ওপর ইজরায়েলের পাশাপাশি আমেরিকাও হামলা চালিয়েছে। প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের গণহত্যাকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছে আমেরিকা। পাক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরেও প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপরও মোদী সরকার ট্রাম্পের মুখের দিকে তাকিয়েই বসে আছেন।
কেন্দ্রের এনডিএ জোট সরকার গত ১২ বছর ধরে বিজেপি-আরএসএসের জনবিরোধী উদার আর্থিক নীতি ও দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতি আদানি-আম্বানিদের স্বার্থে আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়ঙ্কর সঙ্কট ডেকে এনেছে। পুঁজিপতিদের ট্যাক্স কমিয়ে, সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা বৃদ্ধিকরে, জিএসটি লাগু করে, খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এই সময়ে দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আরো বেড়েছে। গরিব ও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, প্রতিরক্ষা, কয়লা, ইস্পাত, বিদ্যুৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন, খনিজ সম্পদ, বিমানবন্দর, পোর্ট সহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ দেশে আর্থিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে মানুষ এই পথে নামতে বাধ্য হয়েছে। একটু একটু করে দানা বঁধছে মানুষের ক্ষোভ। সংবিধান, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার আন্দোলন ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।