• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

আমেরিকায় ‘শাটডাউন’

আমেরিকার ইতিহাসে সেটাই দীর্ঘতম শাটডাউন। এর আগেও শাটডাউনের সময় লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে অনির্দিষ্টকাল সময়ের জন্য বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন পুরোপুরি ‘শাটডাউন’ চলছে। হোয়াইট হাউসের তৈরি প্রশাসনিক অর্থ বরাদ্দের বিল মার্কিন সেনেটে পাশ হয়নি। তার ফলে আগামী অর্থবর্ষের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম থমকে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার রাজনীতিতে একেই ‘শাটডাউন’ বলে। সেনেট অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় দপ্তর বন্ধ থাকবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন আটকে যাবে। যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। শাট ডাউনের জেরে আমেরিকার প্রায় ৯ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর কাজ বন্ধ হয়েছে। তাঁদের বিনা বেতনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৭ লক্ষ কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করে চলেছেন। বেশিদিন ধরে শাটডাউন চললে গোটা দেশে কয়েক লক্ষ সরকারি কর্মচারী ছাঁটাইয়ের মুখোমুখি হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির প্রস্তাবিত বিলটি মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষে পাশ হলেও উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন পায়নি। মোট ১০০ জন সেনেট সদস্যের মধ্যে ৪৪ জন এই বিলের পক্ষে এবং ৪৮ জন বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। ডেমোক্রাটদের আনা অর্থ বরাদ্দের বিলও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে খারিজ হয়ে যায়।

Advertisement

কোন খাতে কত অর্থ বরাদ্দ করা উচিত তা নিয়ে আমেরিকায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাট— দুই দলের মধ্যে বিতর্ক চরমে ওঠে। ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকান পার্টি সামাজিক প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও বার্ধক্য ভাতার ব্যয় বরাদ্দ কমাতে চায়। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় সার্বিক বরাদ্দ বন্ধ করতে চায়। উচ্চ আয়ে করের হার কমিয়ে কর্পোরেট করে ছাড় দিতে চায়। স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম ও ছাত্র ঋণের সুদের হার বাড়াতে চায়। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত ‘অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী’, বিশেষ করে মহিলা ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের ছাঁটাই করতে চায়। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় নজরদারি, অভিবাসন প্রতিরোধ এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন সংস্কারে বরাদ্দ বাড়াতে চান ট্রাম্প। এতে বিরোধীদের পাশাপাশি খোদ রিপাবলিকান পার্টির বেশ কয়েকজন সদস্য আপত্তি জানান। ডেমোক্রাটরা স্বাস্থ্য পরিষেবায় ১ লক্ষ কোটি ডলার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। দুই পক্ষই একে অপরের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। বচসা না মেটায়, গত ১ অক্টোবর থেকে পুরোদস্তুর ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

মার্কিন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, শাটডাউন চললেও স্বাস্থ্যবিমা, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সরকারি পরিষেবা কিংবা পরিবহন পরিকাঠামো বন্ধ রাখা যায় না। ‘বিশেষ জরুরি পরিষেবা’ হিসেবে চিহ্নিত সমস্ত খাতে কাজ বন্ধ হবে না। তবে বাকি সমস্ত সংস্থাকে হয় পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে হবে। আপৎকালীন তহবিলের টাকায় কোনোক্রমে কাজ চালাতে হবে।

এর আগেও আমেরিকায় বেশ কয়েকবার শাটডাউন হয়েছে। তার মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দীর্ঘ ৩৫ দিনের জন্য সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আমেরিকার ইতিহাসে সেটাই দীর্ঘতম শাটডাউন। এর আগেও শাটডাউনের সময় লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে অনির্দিষ্টকাল সময়ের জন্য বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়। শাটডাউন মিটে গেলে তাঁদের আবার পুনর্বহাল করা হয়। আইনত এই সময়কালে প্রাপ্য মজুরিও তাঁদের দেওয়ার কথা। তবে এবারে যে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাঁদের অনেককেই ছাঁটাই করা হতে পারে। ‘ব্যয় কমানোর’ পরামর্শ দিয়ে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের একগুঁয়ে মনোভাবের জন্য শাটডাউনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিপন্ন করে এখন বিরোধীদের দুষছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট পার্টির ‘উগ্র বামপন্থী’ অংশের চক্রান্তেই নাকি ট্রাম্পের অর্থ বরাদ্দের বিল পাশ হয়নি। ট্রাম্পের মুখে হুঁশিয়ারিও শোনা গেল। ‘সরকারের প্রস্তাবিত অর্থ বরাদ্দ বিল পাশ করতে না দেওয়ায় বিরোধীদের শাস্তি পেতে হবে।’ শাস্তিস্বরূপ ডেমোক্র্যাটদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রদেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক খাতে অর্থ বরাদ্দ সার্বিকভাবে বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। স্বাস্থ্য ও বার্ধক্য ভাতা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নেওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পকে ‘উগ্র বামপন্থী নীতি’ বলে চিহ্নিত করে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।

সম্পূর্ণ শাটডাউনের কবলে পড়ে মার্কিন অর্থনীতির এখন নাজেহাল অবস্থা। বিনা বেতনে কাজ, কর্মী সংকোচন ও ছাঁটাই এবং বিশাল বেকার বাহিনীর চাপে সমাজের প্রান্তিক অংশের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুল্কের হার বৃদ্ধি করেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে প্রশাসনিক অর্থ বরাদ্দের বিল আটকে যাওয়ায় সমস্যা আরও গুরুতর হয়েছে। যুদ্ধবাজ ট্রাম্প এখন দেশবাসীর নজর অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছেন।

Advertisement