রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
ফ্রিডরিখ গুগুলফ্ লিখিলেন, ‘সমস্ত শ’, মেটারলিঙ্ক, দ্য’অনুৎসিও মিলিয়া সংস্কৃতির যতটুকু যাহা করিয়াছেন তাহার চেয়ে বেশি করিয়াছেন আত্তিল্পা।’ আরও লিখিলেন, ‘এক জার্মানী ছাড়া আর সমস্ত ইউরোপ পচিয়া গিয়াছে।’ জার্মানীই একমাত্র দেশ ‘যে সৃষ্টি করিতে পারে এবং সৃষ্টি করিতে পারে বলিয়াই যাহার ধ্বংসের ক্ষমতা আছে।’
Advertisement
‘যুদ্ধকালীন চিন্তাকণা’ পুস্তিকায় টমাস মান ফ্রান্সকে হীনভাবে অপমান করিলেন ও জার্মানদের নির্মম ধ্বংসকার্যে (বিশেষত র্যাঁ স্ গির্জা ধ্বংসের ফলে) ফরাসীদের মন যে গভীর শোকে বেদনায় উন্মোত্থিত হইয়া ওঠে তাহাকে বিদ্রূপ করিলেন। জার্মান রণতান্ত্রিকতাকে তিনি সংস্কৃতি রক্ষার পক্ষে প্রয়োজনীয় বলিয়া সমর্থন করিলেন।
এই সকল কারণেই আমি ১৯১৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যাহা লিখি তাহাতে অতিমানব-নীতির নামে জার্মানদের এই ব্যাভিচারে এতখানি তীব্র ও তিক্ত হইয়াছিলাম। কিন্তু ঐ সকল রচনায় ফরাসী মনস্বীদের সম্পর্কে যে প্রশংসার কথা ছিল তাহাকে অতিশয়োক্তি বলা চলিতে পারে, কারণ, ফ্রান্সের মানসক্ষেত্রে যে গভীর বিপর্যয়ের শুরু হইয়াছিল তাহা তখনও আমি বুঝিতে পারি নাই। যাই হোক, সোজা কথায় ফ্রান্সের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাইয়া আমি অপরাধ করিয়াছিলাম।
কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, এই প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হইবার ফলেই আমার বিরুদ্ধে হীন আক্রমণের ঝড় বহিতে শুরু করিল। ‘খ্রীষ্ট ও চিরন্তম সংগ্রাম’ পুস্তিকার প্রশংসায় মুখর বুর্জে ও ফরাসী একাদেমীতে তাহার সতীর্থ ফ্রেদেরিক মাস আমাকে আক্রমণ করিলেন। মাসঁ জার্মান প্রতিভাকে অবহেলার চক্ষে দেখিতেন এবং বলিতেন, সংগীতকে আইন করিয়া ‘র্যাঁ , আলমাঁ’ ও ‘মার্সেইয়েজ’ এই দুইটিতে সীমাবদ্ধ করা উচিত। ফরাসী একাদেমীর মত ধর্মসংস্রবমুক্ত প্রগতিবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ও এই দলে ভিড়িল। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় সরবনে আমার সতীর্থ ফরাসীবিপ্লবের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ওলারও আমার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করিলেন।
২৩শে অকের্টাবর মাত্যাঁ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যভাবে আমাকে আক্রমণ করিলেন। এই প্রবন্ধে সরবন-এর নামে আমার সহিত সর্বসম্পর্ক ছিন্ন করিয়া তিনি আমাকে সম্মান প্রদর্শন করিলেন। পরদিন লাকসীয়ঁ ফ্রাঁসের, ল্যাঁত্রাসিজ ও লা ক্রোয়া—সকলেই তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিল। ওলার, দোদে ও লাল ক্রোয়া— এই তিনটি লইয়া হইল এক পবিত্র সম্মেলন। দূরে বসিয়া গর্বের সহিত আমি দেখিতে লাগিলাম আমাকে তাড়া করিয়া মারিবার জন্য তাহারা কি ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হইতেছে। কিন্তু একথা অস্বীকার করিব না যে, প্রথম আঘাতেই এই নিল্পিপ্ততার পর্বতশিখর হইতে আমি পতিত হইলাম। লা ক্রোয়া আমার বিরুদ্ধে প্রথম যে তীরটি নিক্ষেপ করিল তাহা আমি আমার দেয়ালে টাঙাইয়া রাখিয়াছি, শিকারের পসুর দেহ বা দেহাংশ শিকারের কীর্তি হিসাবে শিকারী যে ভাবে টাঙাইয়া রাখে। লা ক্রোয়া লিখিল: ‘সরবন-এর প্রাক্তন শিক্ষক, বিদেশী ডিগ্রিধারী রম্যাঁ রলা সুইস পত্রিকা ‘জুর্নাল দ্য জেনেভ-এ তাহার জার্মান বন্ধুদের বন্ধুদের নামমাত্র তিরস্কার করিয়া মিত্রশক্তিপুঞ্জকে তীব্রভাষায় আক্রমণ করিয়াছেন কসাক, মরোক্কোবাসী, সুদানী ও শিখদের সাহায্যে ‘সভ্যতার ভিত্তিমূলে প্রচণ্ড আঘাত’ হানিবার জন্য।
নিজেকে সভ্যতার একটি স্তম্ভ মনে করিবার মত এই গগনস্পর্শী দম্ভকে মঃ ওলার মাত্যঁ পত্রিকায় আক্রমণ করিতে দ্বিধা করেন। মঃ ওলার-ও ত’ একসময় শান্তিবাদী ছিলেন।’ ইহার পরেও সামান্য যে ক’জন বন্ধু অবশিষ্ট ছিলেন তাহারাও বিমূঢ় হইয়া আমাকে থামিতে অথবা যাহা বলিয়াছি তাহা প্রত্যাহার করিতে অনুরোধ করিতে লাগিলেন।
(ক্রমশ)
Advertisement



