• facebook
  • twitter
Monday, 15 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

যুদ্ধের পাঁচ বছরের (১৯১৪-১৯) বেদনাময় আমার মানসিক প্রতিক্রিয়ার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছায়া পড়িয়াছে আঁ দস্যু দ্য লা মলে ও প্রেক্যুরসোর নামক দুইটি পুস্তিকায়।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

Advertisement

তারপর ১৯১৯ সালের জুন মাসে ‘প্রেসিডেন্ট উইলসনের নিকট লিখিত পত্রের’ ভাষা হিসাবে আমি উহাতে যে নোট (এই পত্রে) লিখিঃ প্রেসিডেন্টকে ‘কোনো দলবিশেষের নহে, সমগ্র বিশ্বজনগণের জন্য’ সংগ্রাম করতে অনুরোধ জানাই। তাহাতে আমি ্ঘোষণা করি যে ‘উইলসনের ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণিত হইয়া গেল ‘বুর্জোয়া সমাজের মহান ভাবাদর্শের আর কিছু অবশিষ্ট নাই।’

Advertisement

তারপর তাকাইলাম তরুণ সোভিয়েড রাশিয়ার দিকে। দেখিলাম কী অপরিমেয় অমানুষিক সংগ্রাম করিয়া এই শিশুরাষ্ট্র বহুশতাব্দীর নাগপাশ ছিন্ন করিতেছে। ইতিপূর্বে পপ্যুলেয়র পত্রিকায় একটি চিঠিতে আমি সোভিয়েট ইউনিয়েনর বিরুদ্ধে আঁতাতের সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ করিয়া ‘রুশ বোলশেভিকদের সহিত আমার আন্তর্জাতিক মৈত্রীবন্ধন’ পুনরায় জ্ঞাপন করি এবং প্রেক্যরসোর পুস্তকের শেষ বাক্য (‘বিচার স্বাধীনতার ঘোষণাবাণীর’ পরিশিষ্ট, আগস্ট, ১৯১৯) বিভিন্ন দেশের গভর্ণমেন্ট কর্তৃক অবরোধ স্থাপনের স্থাপনের ফলে রুশ বন্ধুদের স্বাক্ষরলাভের অক্ষমতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করিয়া অকুণ্ঠিতভাষায় ঘোষণা করা হয় ‘রাশিয়ার ভাবাদর্শই পৃথিবীর অগ্রগামী চিন্তাধারা।’

যুদ্ধের পাঁচ বছরের (১৯১৪-১৯) বেদনাময় আমার মানসিক প্রতিক্রিয়ার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছায়া পড়িয়াছে আঁ দস্যু দ্য লা মলে ও প্রেক্যুরসোর নামক দুইটি পুস্তিকায়। ১৯১৯ সালের মাঝামাঝি এই প্রতিক্রিয়া আসিয়া দাঁড়াইল একটা অদ্ভুত অবস্থায়— ন যযৌ ন তস্থৌ। একদিকে আমি আশা করিতে লাগিলাম স্বাধীন, সুস্থ, বলিষ্ঠ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ভিত্তির উপর আন্তর্জাতিক মনস্বীতার একটি দুর্গ গড়িয়া ভুলিতে পারিব; অন্যদিকে দেখিলাম, কম্পাসের কাঁটা উত্তরমুখে দাঁড়াইয়াছে—ইঙ্গিত দিতেছে সেই লক্ষ্যস্থলের, যেদিকে ইউরোপের অগ্রগামী সৈন্যদল, সোভিয়েট ইউনিয়নের বীর বিপ্লবীদল চলিয়াছে দৃঢ়পদে অগ্রসর হইয়া। কম্পাসের কাঁটা নির্দেশ দিতেছে সেই পথের—যে পথ সমগ্র মানব সমাজের সামাজিক ও নৈতিক পুনর্গঠনের পথ।

অভিজ্ঞতা আমার আজও শেষ হয় নাই। এই অভিজ্ঞতার পরিশিষ্ট একদিন আমি বলিব; বলিব কেমন করিয়া মাত্র কয়েকজন ছাড়া ইউরোপের কোনো ‘স্বাধীন’ মনস্বীই মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পারেন নাই। বলিব কেমন করিয়া ইউরোপের পথ খুঁজিয়া না পাইয়া অবশেষে ভারতবর্ষের মহাত্মার নিকটে স্বাধীন আত্মার বলিষ্ঠ উদ্বোধনের ও নূতন কর্মপথের সন্ধান পাই। বলিব তারপর কেমন করিয়া ঘটনার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিনিতে পারিলাম সেই আদর্শের সংঘাতকে—যাহাকে মার্কস অর্থনৈতিক বস্তুবাদের কঠোর আইনের নিগড়ে বাধিয়া গিয়াছেন, যাহা আজ পৃথিবীকে দুইটি শিবিরে বিভক্ত করিয়াছে এবং আন্তর্জাতিক ধনতন্ত্র ও সর্বহারা শ্রমিক সঙ্ঘ, এই দুই দানবের মধ্যকার গহ্বর দিনের পর দিন বিস্তৃত হইতে বিস্তৃততর করিয়া চলিয়াছে। বলিব কেমন করিয়া এই ঘাত-সংঘাতের ফলেই আজ আমি এই গহ্বর উত্তীর্ণ হইয়া সোভিয়েট ইউনিয়নের পাশে আসিয়া দাঁড়াইয়াছি। বড় শ্রান্তি, বড় বেদনায় এ যাত্রা।

(ক্রমশ)

Advertisement