রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
‘‘হে ইউরোপ বিদায়… তুমি আজ কবরে পথ হাতড়াইয়া ফিরিতেছ, কবরেই তোমার স্থান, কবরেই তোমার শয্যা। জগতের নেতৃত্বভার অন্যে গ্রহণ করুক।’’
এই রচনার তারিখ ১৯১৬ সালের ২রা নভেম্বর।
Advertisement
বিপ্লব তখনও আরম্ভ হয় নাই কিন্তু সমগ্র ইউরোপের ভস্মের আচ্ছাদনের মধ্যে বিপ্লবের আগুন জ্বলিতে শুরু করিয়াছিল। ফ্রান্সে মজুরশ্রেণীর একটা সংখ্যালঘুদের মধ্যে তখন আবার চেতনা ফিরিয়া আসিয়াছে। সি. জি. সি.-র একটা শাখার নিকট হইতে আমি এক পত্র পাইলাম (১৯১৫ সালের ৫ই-৮ই সেপ্টেম্বর)। জিমারবান্ট যাইবার পথে মারকাইম চিঠিখানি আমাকে দিয়া গেলেন। লেনিন যেখানে কিছুদিন আগে শ্রেণীসংগ্রাম ও মজুর-বিপ্লবের জন্য শক্তিশালী আবেদন করিয়া গিয়াছিলেন সেখানে আসিলেন কিয়েস্থল (১৯১৬ এপ্রিল মাসের শেষ ভাগ)।
এমনকি ফরাসী সেনাবাহিনীর মধ্য হইতে বিদ্রোহের সাংঘাতিক কানাকানি ও কথাবার্তা আমার কানে আসিতে লাগিল। আমি ইহাকে সমর্থন করিলাম না; কারণ এই অন্ধ ক্ষোভ ও অসন্তোষের না ছিল কোনো আদর্শ, না ছিল কোনো সংগঠন, না ছিল কোনো নেতা—যিনি তাহাদের শৃঙ্খলার সহিত পরিচালনা করিতে পারেন। পশ্চিম ইউরোপে লক্ষ্যহীন ধ্বংস অথবা কতকগুলি সামরিক বিবৃতির মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের এই বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি হইতই। গিলবোর নিকট লিখিত বহু পত্রে আমি ইহার তীব্র নিন্দা করি? লেনিন নিজে উহার উৎসাহ দিতেন কিনা আমার সন্দেহ আছে কারণ, চিন্তাশীল ও কর্মবীর নেতা মাত্রই শৃঙ্খলাহীন কার্যকে ঘৃণা করিয়া থাকেন। কিন্তু ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ বড় খবর আসিল। আশার অধীর উত্তরের বাতাস জেনেভার পথে পথে সে খবর বহন করিয়া আনিল। বাতাসে রক্তবসন্তের সৌরভ পাওয়া গেল। খবর আসিল রাশিয়া তাহার শৃঙ্খল ছিঁড়িয়াছে। ঐ সময়েই গর্কির নিকট হইতে একখানি চিঠি পাইলাম। লেখক চিঠির মাঝখানে হঠাৎ থামিয়া— নূতন বড়দিনের আনন্দবার্তা জানাইয়াছেন! খ্রীষ্ট উঠিয়াছেন’! যুদ্ধরত একটা মহাদেশের ওপার হইতে এপারের আমাকে তিনি আলিঙ্গন করিলেন। জেনেভায় স্বাধীনচেতা ফরাসীদের আমাদের সমস্ত দলটি রুশ বড়দিনের অভিনন্দনে একসঙ্গে সাড়া দিয়া উঠিলঃ ‘সত্যই তিনি উঠিয়াছেন’। সকলের সম্মিলিত স্বাক্ষর সম্বলিত একটি পুস্তিকা আমরা প্রকাশ করিলাম। যে পুস্তিকা আমরা প্রকাশ করিলাম উহার মধ্যকার আবেদনটি রচনা করিলাম আমি নিজে। আবেদনটির নাম ‘স্বাধীন ও স্বাধীনতার প্রতি ধাবমান রাশিয়ার প্রতি’ (১৯১৭ সালের ১লা মে)।
পশ্চিম ইউরোপের আমাদের মত আমেরিকা হইতেও স্বাধীনচেতা বহু মনস্বী রুশবিপ্লবের দিকে আকৃষ্ট হইলেন। ধনতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদের মর্মস্থল এই আমেরিকা তখন যুদ্ধের নৈবেদ্য খাইয়া মেদস্ফীত হইয়া উঠিতেছিল। তাহারই মধ্য হইতে আসিলেন ম্যাক্স ইস্টম্যান ও তাহার মাসেস পত্রিকার প্রধান সহ-সম্পাদক জন রীড। জন রীড কয়েকমাস পরেই অক্টোবর বিপ্লবের অপূর্ব ইতিহাস রচনা করিয়া অমর হন। আজ তাহার দেহ ক্রেমলীন-প্রাচীরের তলে লেনিনের পার্শ্বে সমাহিত। ইহাদের উদ্দেশ্যে আমি মৈত্রীর হস্ত প্রসারিত করিয়া দিলাম।
ইউরোপের জাতিগত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করিবার জন্য ইংলণ্ড হইতে, ফ্রান্সের সোশিয়ালিস্ট ও সিণ্ডিক্যালিস্ট সংখ্যালঘু দলের পক্ষ হইতে স্বাধীন মতবাদের সংবাদপত্রগুলি ও রুশ বিপ্লবীদলের দ্বারা যে প্রাণপণ চেষ্টা চলিতেছিল তাহার সংবাদ নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের সহিত চাপিয়া যাইবার জন্য আমি একটি প্রবন্ধে এই প্রথম সুইস সংবাদপত্রগুলিকে আক্রমণ করিলাম। সে প্রবন্ধ পড়িতে পড়িতে একটা বিদ্রোহের আগুনের উত্তাপ অনুভব করা যায়।
(ক্রমশ)
Advertisement



