• facebook
  • twitter
Thursday, 6 February, 2025

মহাকুম্ভে মহামৃত্যু

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় সঙ্গমে অবগাহন করে পুণ্য অর্জন করতে এসে পদপৃষ্ট হয়ে ধরাধাম থেকে বিদায় নিলেন ৩০ জন পুণ্যার্থী।

নিজস্ব চিত্র

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় সঙ্গমে অবগাহন করে পুণ্য অর্জন করতে এসে পদপৃষ্ট হয়ে ধরাধাম থেকে বিদায় নিলেন ৩০ জন পুণ্যার্থী। আহত কম করেও ৯০ জন। হাসপাতালে তারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৌনী অমাবস্যার পুণ্য লগ্নে মঙ্গলবার রাত একটায় পুণ্যার্থীরা আগেভাগে স্নান সারতে উদ্যোগী হলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়— কে আগে যাবে অবগাহন করতে। এই সময় অনেকেই ঠাসা ভিড় ঠেলে যাওয়ার চেষ্টা করেন— যারা বলিষ্ঠ তারা দুর্বল পুণ্যার্থীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে যায়, ফলে তারা মাটিতে পড়ে যায়। আর তাদের মাড়িয়ে দিয়েই চলে যায় অনেকে— ফলে পদপিষ্টের ঘটনা। চরিদিকে কান্নার রোল ওঠে। চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কীভাবে পদপিষ্টদের উদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে কি করা উচিত, তা ঠিক করতেই অনেক সময় চলে যায়। ভিড় ঠেলে তাদের উদ্ধার কাজে হাত লাগায় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

বারো বছর অন্তর প্রয়াগরাজে মহাস্নানের এই পুণ্য লগ্ন আসে। ইতিহাস বলছে, ১৯৫৪ সালে এমনি এক মৌন অমাবস্যায় কুম্ভ মেলায় পুণ্যস্নান করতে এসে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৫০০ জন পুণ্যার্থীর—বিদেশি এক পত্রিকায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮০০ বলা হয়। ১৯৮৬তে হরিদ্বারে কুম্ভ মেলায় পুণ্য স্নান করতে এসে প্রাণ হারান প্রায় ২০০ পুণ্যার্থী। মৃত্যুর কারণ সেই ব্যাপক পুণ্যার্থীদের সমাগম, স্নানের জন্য হুড়োহুড়ি, ফলে পদপিষ্টের ঘটনা এভাবে বিভিন্ন সময় পুণ্যস্থান করতে এসে পুণ্যার্থীদের জীবন গেলেও, তার থেকে শিক্ষা নেয়নি উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রশাসন যার নেতৃত্ব এখন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। শিক্ষা ঠিকমতো নিলে হয়তো এবারের প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করে বিভিন্ন মহল।

এবোরের এই মৌনী অমাবস্যার পুণ্য লগ্নে অবগাহন করে পুণ্য অর্জন করতে এসেছিলেন প্রায় ১০ কোটি পুণ্যার্থী দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। এই বিশাল পুণ্যার্থীদের স্নানকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করার পস্তুতি যথাযথ ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই ভেবে যে এবারের কুম্ভ মেলা যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মনোরঞ্জন করতে পারবেন। কিন্তু বিধি এমনই যে এবারও সাগর সঙ্গমে স্নান করতে এসে প্রাণ হারাতে হল অনেককেই— যা যোগী রাজের রাজনৈতিক জীবনে বড়সড় ধাক্কা খেল। তাই অনেকের সন্দেহ এবারের মেলায় বিপুল জনসমাগম হবে বুঝেও প্রস্তুতি পর্বে গলদ ছিল। তারই ভয়াবহ পরিণাম পদপিষ্ট হয়ে এই জীবননাশ। সুতরাং অনেকের মতে এবার যে শিক্ষা হল, তা মেনে ভবিষ্যতে কুম্ভ মেলা পরিচালনার দায়িত্ব সেনা কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া। সেনাবাহিনী যাতে এই মেলা পরিচালনা করতে পারে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়া।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কুম্ভমেলায় এই প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মৃতের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। খবরে জানা যায় কুম্ভ মেলার এই ঘটনাবলী নিয়ে তিনি যোগাযোগ রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে। কিন্তু এতবড় ঘটনার পর তিনি এখনও প্রয়াগরাজে যাওয়ার কথা ভাবছেন কিনা জানা যায়নি। কেন্দ্রের গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ প্রয়াগে স্নান সেরে এসেছেন যোগীবরের সাথে।

গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। দলকে নির্ভর করতে হয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর দলের সমর্থনের ওপর। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ফল ভাল না হওয়ার জন্য বিজেপি দলের নেতাদের একাংশ দায়ী করেন যোগীবরকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং গৃহমন্ত্রী তার পাশে থাকার জন্য যোগীবরকে কোনও বিপাকে ফেলা যায়নি। যোগীবর সনে এবোরের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে তার দলের মধ্যে হারানো সমর্থন ফিরে পাবেন, কিন্তু তা হল না। কিন্তু মেলায় এই মহা বিপর্যয়ের জন্য দলের কেউ কউ দায়ী করছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তারা মনে করছেন রাজ্য প্রশাসন মেলায় বিপুল পরিমাণ ভক্ত সমাগম হবে জেনেও প্রস্তুতি কি ঠিকভাবে নেওয়া হয়নি? নিলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত বলে তারা মনে করেন। বিরোধীদের মতে এত বড় মেলা সঠিকভাবে পরিচালনা করার দক্ষতা যোগী আদিত্যনাথের নেই। ফলশ্রুতিতে এই বিপর্যয়।

বারো বছর পর এবারের মহাকুম্ভ মেলাকে অন্যান্য বছরের মেলার সাথে তুলনা করা চলে না। বিশ্বাসীদের মতে এ বারের মত গ্রহনক্ষত্র সমাবেশ ৪ বছর অন্তর আসে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছিল মৌনী আমাবস্যার শাহিস্নান। সুতরাং সাধু সন্নাসীরা এই মহালগ্নে স্নান করতে যেমন সারা দেশ থেকে এসেছিলেন, তেমনি সাধারণ মানুষও এই লগ্নে পুণ্যস্নানার্থে প্রয়াগরাজে সে জমায়েত হয়ে ছিলেন। ফলে পুণ্যার্থীদের সংখ্যা এসে প্রায় ১০ কোটিতে দাঁড়ায়। কারণ সে ভাবে মেলা নিয়ে প্রচার হয়েছিল দেশজুড়ে, তাই পুণ্যার্থীরা বেশি সংখ্যায় এসে মিলিত হন।

প্রত্যদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার রাত একটা থেকে দু’টোর মধ্যে। সুতরাং এই পুণ্য সময়েই পুণ্যস্নান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পুণ্যার্থীরা সময় যদি চলে যায়, তার জন্য আগেভাগে স্নান করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। প্রশাসনের কর্তারাও তাদের থামানোর কোনও চেষ্টা করেননি।