• facebook
  • twitter
Thursday, 6 February, 2025

মহাকুম্ভ থেকে এল মৃতদেহ, ময়নাতদন্ত হয়নি, উঠছে প্রশ্ন

কুম্ভমেলায় মৃতদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে যোগী সরকার। তবে সেই ক্ষতিপূরণ আদপে তাঁরা পাবেন কি না তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

নিজস্ব চিত্র

প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমে ১৪৪ বছরের মৌনী অমাবস্যার বিশেষ সময়ে স্নান করতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি হল জামুড়িয়ার কেন্দা এলাকার বছর ৪২-এর বিনোদ রুইদাসের। তার সঙ্গে থাকা শ্যালক বিষ্ণু রুইদাস ও তার বন্ধু প্রেম সমস্ত ঘটনা চোখের সামনে লক্ষ্য করেছেন। মানুষজনের প্রচণ্ড ভিড়ে নিরুপায় হয়ে কোনোক্রমে নিজেদের রক্ষা করলেও বিনোদকে রক্ষা করতে পারেননি তাঁরা। ভয়াবহ এই মুহূর্তের প্রত্যক্ষদর্শী কিশোরীরাও জানিয়েছে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

মহাকুম্ভের মৌনী অমাবস্যার স্নান তাঁদের সবাইকে এতটাই আতঙ্কিত করে তুলেছে যে ভয়ে শিউরে কেঁদে উঠছেন। চারিদিকে চিৎকার শুনেছেন ‘বাঁচাও বাঁচাও’, কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসছে না, চোখের সামনেই পরপর মৃত্যু দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁরা। মহিলা, শিশু ও শুয়ে থাকা মানুষজনের উপর হাজারে হাজারে মানুষ পিষে দিয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তেই কয়েকটা কথা বলে আতঙ্কিত কিশোরী জানালেন নিজের রাগ, রোষ ও জ্বালার কথা। সকলের একটাই উদ্দেশ্য, কুম্ভস্নানে কে আগে পৌঁছবে।

সময়মতো হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ সালে অমৃত স্নানের শুভ মুহূর্ত শুরু, আর সেখানেই সেই বিশেষ মুহূর্তে কীভাবে গঙ্গা-যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে স্নান করতে গিয়ে হুটোপুটি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যে। ভোররাতে প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ অনেকেই সে সময় স্নান করতে গেলে অসংখ্য পুণ্যার্থী একে অপরের ওপর আছড়ে পড়েন। আর সেই ভিড়েই চাপা পড়েন জামুরিয়ার বছর ৪২-এর বিনোদ। তার শ্যালক বিষ্ণু রুইদাসের দাবি, মুহূর্তে তাঁরা তিনজনে তিনদিকে হয়ে যান। আর এরপরই তাঁকে না পেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে খোঁজ করেন তাঁর।

দীর্ঘ খোঁজ-তল্লাশির পর মৃতের তালিকায় তাঁর নাম দেখে বিষ্ণু জানতে পারেন যে, তাঁর জামাইবাবু মারা গেছেন। এরপরই সেখানের পুলিশ প্রশাসন ৩০ তারিখ দুপুরে তাঁর দেহটিকে উত্তরপ্রদেশের শববাহী গাড়িতে একজন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও এক সঙ্গী-সহ বিষ্ণুকে তাঁর জামাইবাবুর মৃতদেহ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় বাড়ির উদ্দেশে। তবে তাঁর দেহের কোনও ময়না তদন্ত করা হয়নি। জামুরিয়া থানার কেন্দা ফাঁড়িতে দেহটিকে নিয়ে আসা হলেও দেহটির যেহেতু ময়নাতদন্ত হয়নি তার জন্য দেহটি আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। যদিও দেহটিকে কীভাবে ময়না তদন্ত ছাড়াই যোগী সরকার পাঠিয়ে দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা।

অনেকেই দাবি করেছেন, যোগী সরকার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে এরকমভাবে দেহ পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন যে, তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জানা গেছে, কুম্ভমেলায় মৃতদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে যোগী সরকার। তবে সেই ক্ষতিপূরণ আদপে তাঁরা পাবেন কি না তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।