মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামের শুল্ক যুদ্ধের মোকাবিলায় বহু দেশ সরব হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকার এখনও নীরব। এই প্রশ্নে আমেরিকার সঙ্গে কাকুতি মিনতি করেই দায় সেরে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। উল্টে মার্কিন পণ্যে দেদার শুল্ক ছাড় দিতেও দ্বিধা নেই মোদীর। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছেন যে, দেশের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল আমেরিকা সফর কালীন আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। ভারত নিজের স্বার্থের কথা অবশ্যই জানাবে আমেরিকাকে।
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের হুমকির মুখে আমেরিকাকে তোষামোদের পথ ভারত নিলেও সে পথে নেই চিন, কানাডা বা মেক্সিকোর মতো দেশ। আমেরিকা তাদের দেশের পণ্যে শুল্ক চাপানোয় তারাও আমেরিকার পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে জবাব দিয়েছে। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ শি সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকার বর্বরোচিত শুল্ক নীতি চিন কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না। মার্কিন প্রশাসন তাদের বাণিজ্যে সুবিধামতো শুল্ক বসানোর যে নীতি নিয়েছে সেই নীতি যদি বিশ্বের সব দেশ নেয় তবে সারাবিশ্ব একটা জঙ্গলে পরিণত হবে। এটা চলতে পারে না বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে চিন। পাল্টা চাপা পড়ে ট্রাম্প তাঁর মত বদল করে ঘোষণা করেছেন, ওই দুই দেশে নতুন শুল্ক চালু হচ্ছে না। তা একমাস স্থগিত রাখা হচ্ছে।
আবার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকায় আমদানি হওয়া চিনের সব পণ্যে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক চাপিয়ে দেয়। চিন এই শুল্ক নীতির প্রতিবাদ করেই থামেনি তার বদলা নিতে চিন আমদানি হওয়া আমেরিকার পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে। চিনে রপ্তানি হওয়া আমেরিকার যেসব পণ্যে চিনের শুল্ক বসেছে তা হলো, মুরগী, শুয়োর ও গরুর মাংস এবং সয়াবিন। এছাড়া চিনে যেসব আমেরিকার সংস্থা ব্যবসা করছে তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে চিন সরকার। এভাবেই ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ মোকাবিলা করছে চিন।
আমেরিকা যে বর্বরোচিত শল্ক নীতি নিয়েছে তার বিরুদ্ধে লাগাতার মোকাবিলার পথ নিয়েছে চিন। ইতিমধ্যে তারা আমেরিকার পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছে। শুল্ক ছাড়া অন্য পথে বাণিজ্য বন্ধের হুঁশিয়ারি শুনিয়ে দিয়েছে চিন। চিনকে দাবিয়ে রেখে মুখে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখবে, এই দু’মুখো নীতি সম্পর্কের উন্নতি করে না। দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। ট্রাম্পের দেশের শিল্প বাণিজ্যের সুরক্ষায় এই শুল্ক নীতি মেনে যদি সবদেশ তাদের দেশের বাণিজ্যের সুরক্ষায় শুল্ক চাপাতে থাকে তবে বিশ্বে জঙ্গলের রাজত্ব শুরু হয়ে যাবে। মার্কিন শুল্ক নীতির বিরোধিতায় নামতে হবে বৃহৎ দেশগুলিকেই, শুল্ক যুদ্ধে বাণিজ্যের মুনাফার হাত থেকে ছোট ও দুর্বল দেশগুলিকে বাঁচাতে।
মার্কিন শুল্ক নীতি বিরোধের পরিসর আরও বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে চিন। মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে মোকাবিলার পথ দেখিয়েছে চিন। আমেরিকার শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বহু দেশ সরব হলেও একমাত্র ভারতের অবস্থান নীরব থাকা। ট্রাম্প সরাসরি ভারতের নাম করে তার আমেরিকার পণ্যে বিপুল শুল্ক চাপানোর নীতির বিরোধিতা পাল্টা তারা ভারতের পণ্যে চড়া হারে শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেও মোদী সরকারের ছোট-বড় মন্ত্রীর মুখে কোনও প্রতিবাদী সুর শোনা যায়নি। উলটে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমেরিকার শুল্ক নীতির তীব্র সমালোচনা করে কংগ্রেস দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘মোদী শুধু তারিফ (প্রশংসা) বোঝেন। ট্যারিফ (শুল্ক) বোঝেন না। ভারতের নাম উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবমাননা করলেও কোনও প্রতিবাদ হয় না মোদী সরকারের পক্ষ থেকে। মোদী সরকার এখন ‘নমস্তে ট্রাম’ নীতি নিয়েই চলেছে। মান-অপমান সব বিসর্জন দিয়ে আমেরিকার জয়ধ্বনি করে চলেছে।