• facebook
  • twitter
Friday, 2 May, 2025

নির্লজ্জ মোদী

কোভিডের সময়ও ট্রাম্পের হুমকির কাছে নতজানু হতে দেখা গিয়েছিল মোদীকে। অভিভাষীদের নিয়ে এবার ট্রাম্প প্রশাসন যা করেছে, তা বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়।

ফাইল ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন কঠিন অভিভাষণ নীতি চালু হতে চলেছে। সে দেশের ভোট রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। সেই দিক থেকে দেখলে কথা রাখার দায় আছে বৈকি ট্রাম্পের। তবে তা পালনে তিনি এমন কিছু বিতর্কিত ব্যবস্থা নিয়েছেন, যা শুধু সে দেশের সংবিধান বিরোধীই নয়, অমানবিকও বটে। যথারীতি তাঁকে তার জন্য বিচারব্যবস্থার কাছে ধাক্কাও খেতে হয়েছে। সে অন্য কথা। প্রশ্ন অন্যখানে। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে দেশটা ক্রীতদাস প্রথার যুগে পড়ে থাকলে তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ আছে। ট্রাম্পের পদক্ষেপ যেন তারই উৎকট প্রকাশ। ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে সংবাদপত্রগুলির মোদী বন্দনায় বিভ্রান্ত সেদেশে কর্মরত ভারতীয়রা কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছিল। দেখা গেল সবই মিথ্যে।

এই বন্দনা যে নিছকই মোদীকে তুষ্টিকরণ তা মার্কিন মুলুক থেকে বিতাড়িত অভিভাষীদের কথা থেকেই স্পষ্ট। প্রথম দফায় পায়ে বেড়ি এবং হাতে লোহার শিকল বাঁধা যে ১০৮ জনকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাঁদের অভিজ্ঞতা সত্যিই মর্মান্তিক। তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্রের এই আচরণে সকলেই বিস্মিত। ভারত সরকারের নির্লিপ্ততাতেও সকলেই বিস্মিত। একসময় আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের ধরে ধরে জাহাজে পশুর মতো আমেরিকায় নিয়ে আসা হতো। একইভাবে সামরিক বাহিনীর মালবাহী উড়ো জাহাজে যেভাবে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের ফেরানো হচ্ছে তা এককথায় জঘন্যতম নৃশংসতা। বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতকে কী চোখে দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই ঘটনা তেকেই তা স্পষ্ট।

মার্কিন প্রশাসন অবশ্য তা পরিষ্কার করে দিয়েছে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সময়ই। সেখানে বিশ্বের ছোটবড় নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আমন্ত্রিত হলেও উপেক্ষিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের একটা বৈঠক হয়েছিল ঠিকই, তবে তাও বারতের পক্ষে খুব সুখকর ছিল না। কারণ সেদেশের প্রেস নোটে অভিভাষণ নীতি যে ভারতের ক্ষেত্রেও কঠোরভাবে লাগু হতে চলেছে, তা যেমন শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক অস্ত্র কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করাও ছিল ওই বৈঠকের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতে প্রেস রিলিজে কিন্তু এই কথাগুলির প্রকাশ ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের একটা বৈঠকের কথা বলা হয়। সেদেশ থেকে ভারতীয় শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর এমন অমানবিক পদ্ধতি নিয়ে ভারত সরকারকে কোনও বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিও এ নিয়ে তেমন মুখ খোলেনি। ভারত সরকার এবং বৃহৎ পুঁজির মালিক পোষিত সংবাদপত্রের এই ধরনের আচরণে কারও কারও মনে প্রশ্ন দেখা দিলেও একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে এই নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিশ্বে ভারতের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা যেমন প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে এই ঘটনা, তেমনই মোদী বন্দনায় নিয়োজিত সংবাদমাধমগুলির মুখে তা ঝামা ঘষে দিয়েছে, যা যে কোনও ভারতবাসীর পক্ষে অপমানজনক।

এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা হলো, যাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা কেউই সাধ করে সেদেশে যাননি। জীবিকার প্রয়োজনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সরকার কিন্তু এই দায় এড়াতে পারে না। শুধু তাই নয়, যাঁরা ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন এমন হাজার হাজার কর্মী দেশে ফিরে এলে বা সেদেশে যাওয়ার পথ বন্ধ হলে এখানে শ্রমের বাজারে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা মোকাবিলায় সরকারের কোনও সুস্পষ্ট নীতি নেই। কোবিডের সময়ও ট্রাম্পের হুমকির কাছে নতজানু হতে দেখা গিয়েছিল মোদীকে। সবকিছু ছাপিয়ে অভিভাষীদের নিয়ে এবার ট্রাম্প প্রশাসন যে নজির সৃষ্টি করেছে, তা নৃশংস বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়।