• facebook
  • twitter
Saturday, 17 May, 2025

প্রধানমন্ত্রী-প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠক, বড়সড় পদক্ষেপের জোরালো ইঙ্গিত

রবিবার সন্ধ্যায় সেনাপ্রধানের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর সোমবার সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছবি: এক্স হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত।

জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের নৃশংস হামলার পর সরকারের তরফে বড়সড় পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। রবিবার সন্ধ্যায় সেনাপ্রধানের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর সোমবার সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বৈঠক হয় তাঁর। জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে এবং উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে যে তল্লাশি অভিযান চলছে সেই সম্পর্কে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর।

পহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশ জুড়ে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাল্টা প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। এই হামলার পর সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক প্রত্যাঘাত করেছে ভারত সরকার। ঠিক তেমনই যদি কোনওভাবে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত, সেই নিয়ে আলোচনা করতেই সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে হাজির হন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। পাকিস্তানকে পহেলগামের ঘটনার পালটা জবাব দিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তারই সামগ্রিক রুপরেখা তৈরির পরিকল্পনা চলছে বলে জল্পনা দানা বাঁধছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাতের পর সেই জল্পনা আরও শক্তিশালী হয়েছে।

রবিবারই চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান রাজনাথের সঙ্গে দেখা করে সেনার প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত জানান। অনুমান, এদিন সেগুলিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মনে করা হচ্ছে, সেনাপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া বিবরণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট করেন। ফলে এই সাক্ষাত বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিল্লি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত সর্বত্র উচ্চস্তরের সতর্কতা জারি হয়েছে। গোটা বিশ্বজুড়েই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ভারত বড় কোনও পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে পহেলগামে হামলা নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘এই হামলার পর প্রতিটি ভারতীয়র রক্ত টগবগ করে ফুটছে। সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকদের কাপুরুষতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। যারা কাশ্মীরে শান্তি, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের অগ্রগতি গ্রহণ করতে পারছে না, তারাই এই ষড়যন্ত্র করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে কঠিনতম জবাব দেওয়া হবে এবং আক্রান্ত পরিবারগুলিও ন্যায়বিচার পাবে।

প্রসঙ্গত, সর্বদল বৈঠকে অংশগ্রহণ করে বিরোধীরাও বার্তা দিয়েছেন, পহেলগামের জবাব দিতে সরকার যা পদক্ষেপ করবে তাতে সমর্থন থাকবে বিরোধীদের। অন্যদিকে বিজেপির নেতারাও পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার আওয়াজ তুলেছেন। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে বলেন, অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের হাতে না তুলে দিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হোক।

পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরে ভারতীয় স্থলসেনা, নৌসেনা এবং বিমান বাহিনীকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। তিন বাহিনীর তরফে যুদ্ধের মহড়াও করা হয়েছে। যুদ্ধ প্রস্তুতির বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে তিন বাহিনী। এই পরিস্থিতিতেই রবিবার সন্ধ্যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন সিডিএস।

এরই মধ্যে তুরস্ক বিমানবাহিনীর সি-১৩০ হারকিউলিস নামে সেনা পণ্যবাহী বিমান করাচি বিমানবন্দরে এসে নেমেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে যে, ওই বিমানে যুদ্ধের সরঞ্জাম আনা হয়েছে। তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের অনেক দিন ধরেই সামরিক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই বিমান পাকিস্তানে এসেছে বলে অনুমান। করাচি ছাড়াও অন্তত ৬টি সি-১৩০ বিমান ইসলামাবাদের একটি ঘাঁটিতে এসে নেমেছে। তবে এই বিমানগুলিতে কী কী সরঞ্জাম এসেছে, তা নিয়ে গোয়েন্দা সূত্রের তরফে কিছু জানা যায়নি।

তুরস্কের পাশাপাশি চিন পাকিস্তান বিমানবাহিনীকে অত্যাধুনিক বায়ু থেকে বায়ুতে ছোড়ার পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। ভারতের রাফাল জেট যুদ্ধবিমানের ক্ষেপণাস্ত্রের থেকে আরও শক্তিশালী এই ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের সোয়াত এবং স্কার্দু বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। রণকৌশলের দিক থেকে এই দুটি জায়গাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল অনন্তনাগ জেলার পহেলগামে ভয়াবহ হামলায় ২৫ জন পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন নিহত হন এবং ১৬ জন আহত হন। এরপরেই গোটা এলাকা জুড়ে চলছে সেনাবাহিনীর তল্লাশি অভিযান। হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমেও জঙ্গিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে বলবৎ করা হয়েছে চরম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।