• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে

প্রশ্ন উঠেছে, এই যুদ্ধবিরতি আমেরিকার ভয়ে, নাকি অন্য কোনও বাধ্যবাধকতায়। বাণিজ্য সংক্রান্ত অসহায়তা, নাকি পরমাণু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল।

ফাইল চিত্র

সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারত যখন সাফল্যের দোরগোড়ায়, তখন চোদ্দ হাজার কিলোমটার দূরে হোয়াইট হাউসে বসে আগাম ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যুদ্ধে ভারতের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান সহ একাধিক পাক বিমানঘাঁটি বিধ্বস্ত, ৯টি কুখ্যাত জঙ্গি ডেরা ধ্বংস, পাক এয়ার ডিফেন্স খানখান, রাফাল, এস-৪০০, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্রহ্মসের মিলিত শক্তিতে পাকিস্তান পরাজয়ের সিঁদুরে মেঘ দেখছে, তখন জঙ্গি রাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর সক্রিয় মধ্যস্থতাতেই যুদ্ধ থেমেছে। উত্তেজনা কমেছে।

দুই রাষ্ট্র যাতে দ্রুত শুধু আলোচনার টেবিলেই নয়, নৈশভোজে মিলিত হয়, সেই আশাও তিনি করেছেন বুক ফুলিয়ে। শুধু যুদ্ধের আবহেই নয়, দিল্লি সরকারের পরোয়া না করেই আবার তিনি বলেছেন, ভারত ইতিমধ্যেই মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই যৌথ ঘোষণার প্রয়োজন ছিল। একতরফা এভাবে কেউ জানাতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারত-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ নতুন খাতে বইতে শুরু করবে। অথচ অ্যাপল সংস্থার কর্ণধার টিম কুককে ভারতে উৎপাদনের পক্ষে অগ্রসর হতেও নিষেধ করেছেন ট্রাম্প। আগাম যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ও ভারতের শূন্য শুল্ক নিয়ে তৃতীয় দেশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের এই ঘোষণা ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত হেনেছে। যুদ্ধের সময় দলমত নির্বিশেষে সকল ভারতীয় রাষ্ট্রের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময় মার্কিন দাদাগিরির নেপথ্যে রয়েছে অন্য চক্রান্ত। ভারতের বাজার হাতছাড়া হওয়ার ভয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যবসা হল আসন লক্ষ্য।

৫৪ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধবিরতির ফাঁদে পা দেননি। হোয়াইট হাউসে তখন ক্ষমতায় আসন ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। আমেরিকার চোখের সামনেই সৃষ্টি হল নতুন বাংলাদেশ সরকার। তখন আমেরিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। আর সাম্প্রতিক বিশ্বে গত তিন বছর ধরে শক্তিধর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। মাত্র ৪ কোটি মানুষের দেশ প্রত্যাঘাতে ব্যস্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে। হোয়াইট হাউসে বসেই নিজেদের অবস্থানের কথা বলে এসেছেন জেলেনস্কি। রিমোটে কেউ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সাহস দেখায়নি। বরং আরও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য রেকর্ড ৫৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায়। দু’পক্ষের একসঙ্গে বসে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসার কথা থাকলেও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন হাজিরই হননি সেই বৈঠকে। ইজরায়েল এবং হামাসের যুদ্ধও চলছে আমেরিকাকে পাত্তা না দিয়েই।

সন্ত্রাসবাদের জনক পাকিস্তানকে উন্নত বিশ্বে কেউ বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রের নাম করে তখতে রাজনৈতিক নেতারা থাকলেও দেশটা চালায় সেনাবাহিনী। আমেরিকাও বিশ্বাস করে না পাকিস্তানকে। ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি আর পাকিস্তানের মাত্র ২৫ কোটি। ব্যবসার নিরিখে তাই ভারতের বাজার অনেক বড় আকর্ষণের ক্ষেত্র। গোটা বিশ্বে ইসলামিক মৌলবাদ এবং সন্ত্রাস আজ দগদগে ঘায়ের মতো। সর্বশক্তি দিয়ে এর নির্মূল না করলে শুদ্ধিকরণে বিনাশ হবে না। চিন বাদে বিশ্বের তাবড় শক্তি কথাটা বিলক্ষণ জানে।

প্রশ্ন উঠেছে, এই যুদ্ধবিরতি আমেরিকার ভয়ে, নাকি অন্য কোনও বাধ্যবাধকতায়। বাণিজ্য সংক্রান্ত অসহায়তা, নাকি পরমাণু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল। তাই কি মোদীজি বারবার বলছেন, ‘ভবিষ্যতে আর ভারতকে পরমাণু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে নিরস্ত্র করা যাবে না।’ এবারও কি সেরকম কোনও আশঙ্কা থেকেই মার্কিন মধ্যস্থতা মানতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার।