• facebook
  • twitter
Sunday, 11 May, 2025

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে

যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রশাসন কুম্ভ মেলার প্রস্তুতি শুরু করে।

ফাইল চিত্র

দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে এখন থেকেই গৈরিক শিবিরে জোর জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেল। মহাকুম্ভের পর উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছিলেন, বিজেপির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের নাম ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু তাঁর বক্তব্য মেলেনি। বিজেপি এখনই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে চায় না। যদিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বিজেপি দলে এগিয়ে আছেন অনেকেই। তবে এই দৌড়ে যোগী আদিত্যনাথ এগিয়ে। নাম রয়েছে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক ভালো।

উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন আর দু’বছর পর। আর পরের লোকসভা নির্বাচন হবে ২০২৯-এ। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ভালো ফল করতে পারেনি। যার জন্য বিজেপি এককভাবে সরকার গড়তে পারেনি। সরকার গড়তে দলকে নির্ভর করতে হয় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর দলের সমর্থনের ওপর। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য বিজেপি নেতাদের একাংশ দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। কারণ তিনি রাজ্যের প্রশাসন সঠিকভাবে চালাতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে— তাই অনেক অবাঞ্ছিত, অপ্রীতিকর ঘটনা রাজ্যে ঘটেছিল। যোগীবর তা কড়া হাতে দমন করতে পারেননি। যে কারণে উত্তরপ্রদেশের সর্বশ্রেণির মানুষ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়ারা যোগীর শাসন পদ্ধতি নিয়ে খুশি ছিলেন না। মানুষের এই ক্ষোভ এবং মুখ্যমন্ত্রীর শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থতা রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়। সুতরাং দুই বছর পর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে যদি বিজেপি সিংহভাগ আসন দখল করতে পারে, তাহলে যোগীবরের ভবিষ্যৎ অনেকটাই উজ্জ্বল হবে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।

তারপর রয়েছে লোকসভার ভোট ২০২৯-এ। এই নির্বাচনেও বিজেপিকে বেশির ভাগ আসন পেতে হবে। অতীতে দেখা গেছে যে দল উত্তরপ্রদেশের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে, সেই দলের পক্ষে কেন্দ্রে সরকার গঠন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। যোগীবর নিজেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর এই ইচ্ছে বা বাসনা তখনই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সহায়ক হবে যদি উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের ফল আশানুরূপ হয়। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলে যোগীবরের রাজনৈতিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। তারপর রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। জানা যায় বিজেপি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নতুন কোনও মুখ নিয়ে ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনে লড়বে। তবে সে মুখকে হবেন, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি এখনও। প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন একাধিক নেতা। তবে মূল লড়াই হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা যোগী আদিত্যনাথ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যে। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা এখন থেকেই চলছে। অখিলেশ যাদব অবশ্য যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিত শাহ— এই দুই শিবিরের লড়াই উস্কে দিয়েছেন। মহাকুম্ভের পর যোগী আদিত্যনাথও ভেবেছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ অনেকটা সুগম হল। কিন্তু মহাকুম্ভে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বিজেপি নেতৃত্ব যোগীবরের সমালোচনা করে। বিজেপির শীর্ষ নেতারা বলেন, ভবিষ্যতে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে অখিলেশ যাদবের মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই।

যদিও যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রশাসন কুম্ভ মেলার প্রস্তুতি শুরু করে। ১২ বছর পর এই মহাকুম্ভ মেলায় পুণ্যার্থীদের ভিড় বেশি হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল সরকার। মৌনী অমাবস্যার রাতের পুণ্য লগ্নে সঙ্গমে অবগাহন করার জন্য পুণ্যার্থীদের মধ্যে যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়, তাতে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জন মারা যান এবং অনেকেই আহত হন। যোগীবর দাবি করেন, যেখানে ৬০ কোটি পুণ্যার্থী মহাকুম্ভে যোগ দিয়েছেন— সেখানে এটা একটা বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়। আরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারত, কিন্তু প্রশাসন অতি দক্ষতার সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই দুর্ঘটনা ছাড়া আর কয়েকটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সুতরাং মহাকুম্ভের আয়োজন তার সরকার দক্ষতার সঙ্গে করেছে। তিনিও খুশি এই মহাকুম্ভে প্রায় ৬০ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম দেখে। বিজেপি নেতাদের একাংশ এই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য তাঁর সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, এই পুণ্য সময়ে স্নানের জন্য পুণ্যার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হতে পারে— তা আন্দাজ করা প্রশাসনের উচিত ছিল। আর সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া।

তবে যোগীবরের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা তো আছেই— তার চাইতে তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ দুই বছর পর এই রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখা। যদি তৃতীয় বছরের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ধরে রাখতে পারেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ৗর দৌড়ে যোগীবর অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।