নির্বাচন কমিশনের অবস্থানই মেনে নিল দেশের শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য নয়। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী বা এসআইআর-কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে বিচারপতি সূর্য কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ৷ প্রসঙ্গত বিহারে এসআইআর চলাকালীন ভোটারদের কাছ থেকে যে সমস্ত নথি নির্বাচন কমিশনের তরফে চাওয়া হয়েছিল, সেখানে শুধুমাত্র আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি৷ আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তার সঙ্গে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আরও বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল৷ এ দিন কমিশনের সেই অবস্থানেই সিলমোহর দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷
মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘আধার নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে না, নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান সঠিক৷ আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার আগে তা যাচাই করা প্রয়োজন৷’ বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘প্রথমেই দেখতে হবে কমিশনের কাছে যাচাই করার ক্ষমতা আছে কিনা। যদি না থাকে, তবে অন্য কিছু ভাবাই যাচ্ছে না। তবে ক্ষমতা থাকলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
Advertisement
নির্বাচন কমিশন আগেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। এবার কমিশনের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ, আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসাবে নেওয়া যায় না বলে জানাচ্ছে কমিশন। তারা ঠিকই বলছে। এই নথির ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আলাদা করে যাচাই করতে হবে। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
Advertisement
আইনজীবী কপিল সিব্বল এদিন সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘এসআইআর-এর ফলে বহু মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ চলে যাবে৷ বিশেষত যাঁরা প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারবেন না, তাঁদের নাম বাদ যাবে৷ তিনি আরও দাবি করেন, ২০০৩ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল তাঁরাও ফর্ম জমা দিতে না পারলে তাঁদের নাম বাদ চলে যাবে৷ এমন কি, ঠিকানা বদল না হলেও নাম বাদ চলে যাবে৷’
সিব্বল আরও অভিযোগ করেন, ৭.২৪ কোটি মানুষ ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেও মৃত কিংবা ঠিকানা বদলের অজুহাতে ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ যদি সত্যিই নাম বাদ যাওয়া ওই সব মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে কিংবা ভোটাররা সত্যিই ঠিকানা বদল করেছেন কি না, তা যথাযথ ভাবে কমিশন যাচাই করে দেখেনি৷ হলফনামায় কমিশন একথা স্বীকার করে নিয়েছে বলেও দাবি করেন সিব্বল৷
আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘একটি বিধানসভা এলাকায় ১২ জনকে জীবিত দেখানো হয়েছে। অথচ তাঁরা মৃত। আবার অন্যত্র মৃত ভোটারদের জীবিত বলে দেখানো হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘বিএলও-রা কী কাজ করেছেন? তাঁদের যাচাই কাজ সঠিক ভাবে হয়নি।’
শুনানির একটি পর্যায়ে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘যাঁদের আপত্তি তাঁরা কোথায়, তাঁদের তালিকা জমা দিন।’ তবে সিব্বল জানান, অনেক বুথে এই রকম ঘটনা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মামলাকারী পক্ষ কী ভাবে তা ট্র্যাক করবে, তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলেন সিব্বল।আইনজীবী সিব্বল আদালতে জানান, ‘অনেক সময় কমিশন যে সব তথ্য চাইছে, আমার কাছে সেই সব তথ্য নেই। তখন কীভাবে আবেদন গ্রহণ হবে?’
অন্য দিকে, কমিশনের আইনজীবী জানান, এটি একটি খসড়া তালিকা। তিনি বলেন, ‘আমরা নোটিস দিয়েছি। কারও কোনও আপত্তি থাকলে জানাবেন। কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। আপত্তি জানিয়ে আবেদন করলে কমিশন তা শুধরে দেবে।
Advertisement



