ভোটার তালিকায় যদি সত্যিই গরমিল থাকে, তবে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে এই দাবিই তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, যদি ভোটার তালিকায় বিস্তর গরমিল থাকে, তার অর্থ গত বছরের লোকসভা ভোটও এই গরমিল-সহ ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই হয়েছে।
সেই ভোট থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারই ইস্তফা দেওয়া উচিত বলে মনে করেছেন অভিষেকের। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সাংসদের বক্তব্য, ‘ভোটার তালিকায় গরমিল থাকলে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল প্রসিডিং শুরু করা হোক, নির্বাচন কমিশন থেকে এফআইআর করা হোক, ফৌজদারি মামলা শুরু করা হোক।’
Advertisement
সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবি তুলে এবং এসআইআর সমর্থনের পেছনে কিছু শর্ত তুলে সাংসদ বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিজেপি সাংসদেরা ইস্তফা দিন। সারা দেশের মানুষ এসআইআর-কে স্বাগত জানাবে। বিজেপি শুরু করুক, আমরা সকলে ইস্তফা দেব। লোকসভা ভেঙে দিয়ে সারা দেশে এসআইআর হোক। তারপরে আবার নির্বাচন হোক।’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘কেন এখনও আমরা ডিজিটাল ভোটার লিস্টের অ্যাক্সেস পাব না? কেন বিরোধী-রাজ্যগুলিতে জোর করে করা হচ্ছে এসআইআর? মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম একই এপিক নম্বর বিশিষ্ট একাধিক ভোটারের প্রসঙ্গ তুলে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছিলেন। এই প্রশ্নগুলির উত্তর কে দেবে?’
Advertisement
সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। অভিযানকে কেন্দ্র করে মাঝ রাস্তাতেই বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বাধে দিল্লি পুলিশের। এদিন অভিষেক বুঝিয়ে দিলেন, সোমবারের কর্মসূচি যা ছিল, আগামী দিনে তার চেয়েও বড় প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত তৃণমূল। তাঁর ভাষায়, ‘বিজেপি দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে জোরজবরদস্তি সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। এখন মানুষের ভোটাধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে। আমরা এটা করতে দেব না। যা দেখেছেন, তা সবে শুরু।
বাংলার একটা মানুষেরও যদি ভোটাধিকার কাড়ে, তবে এক লক্ষ মানুষ নিয়ে কমিশন ঘেরাও হবে। কোনও বিজেপি নেতা তখন তাদের রক্ষা করতে পারবে না। এ রাজ্যে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলার মানুষের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে বিজেপি! বাংলার মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বিএলএ-২ এর বিস্তারিত তথ্য কমিশনের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়া করবে না।’
দিল্লি পুলিশের ‘বর্বরতা এবং অতিসক্রিয়তার’ বিরুদ্ধে সরব হয়ে তাঁর অভিযোগ, মহিলা সাংসদদের চুলের মুঠি ধরে আটক করা হয়েছে! রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন সাংসদ ছিলেন ওই কর্মসূচিতে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অভিষেকের মতে, ‘অশান্তির কোনও জায়গাই ছিল না। তারপরেও কমিশন জনপ্রতিনিধিদের দফতর পর্যন্ত যেতে দেয়নি। এর থেকেই বোঝা যায় কমিশনের কাছে কোনও জবাব নেই।’ নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির মধ্যে আঁতাঁতের তত্ত্বও তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, কমিশন একটি নিরপেক্ষ সংস্থা। কমিশনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠলে বিজেপি কেন ঢাল হয়ে দাঁড়াবে? অভিষেকের কথায়, ‘কমিশন যদি নিরপেক্ষ থাকে, তবে সরাসরি সাংসদদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। বিজেপি সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ক্রীতদাস এবং তল্পিবাহকে পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশন সরকারপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছে!’
Advertisement



