পূর্ব প্রকাশিতর পর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ ছিল সোভিয়েত জনগণের দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ (১৯৪১-১৯৪৫), যখন হিটলারী জার্মানি ও তার মিত্রদের প্রধান শক্তিসমূহের আঘাত ঠেকাতে হয়েছিল সোভিয়েত মানুষকে। ফ্যাসিস্ট জার্মানির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের জোটটির বিরুদ্ধে সোভিয়েত জনগণকে প্রকৃত পক্ষে একাই একনাগাড়ে তিন বছর লড়তে হয়েছিল। ঠিক পূর্ব রণাঙ্গনেই বিনষ্ট হয় সেই জোটের সামরিক ক্ষমতা, এবং কঠোর সংগ্রামে বিধ্বস্ত হয় ফ্যাসিজম। ১৯৪৫ সালের ৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদ্যোক্তা নাৎসি জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। ২ সেপ্টেম্বর, সোভিয়েত সৈন্য বাহিনীর হাতে কুয়ান্টুং বাহিনীর পরাজয়ের পর, সমরবাদী জাপানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়।
Advertisement
ফ্যাসিস্ট জোটের বিরুদ্ধে বিজয় ছিল হিটলারবিরোধী জোটের দেশসমূহের জাতিগুলোর মিলিত বিজয়, তবে তাতে চূড়ান্ত ভূমিকা পালন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত-জার্মান রণাঙ্গনে বিধ্বংস হয়েছিল জার্মানি এবং তার তাঁবেদার রাষ্ট্রগুলোর প্রধান শক্তিসমূহ।
Advertisement
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বলি হয় অগণিত মানুষ, তা জনগণের জন্য নিয়ে আসে অকথ্য দুঃখদুর্দশা আর লাঞ্ছনা। এই যুদ্ধে নিহত হয় ৫ কোটিরও বেশি লোক। বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দাঁড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ কোটি ডলার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় অসংখ্য শহর আর গ্রাম, বিলুপ্ত হয়ে যায় মানব প্রতিভার বহু মহান সৃষ্টি, ক্ষত, রোগ আর অনাহারের দরুন বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে কোটি কোটি মানুষ। এরূপই ছিল সাম্রাজ্যবাদ প্রসূত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ানক মূল্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ৫টি পর্বে বিভক্ত করা যায়। প্রথম পর্ব (১৯৩১ সালের ২২ জুন থেকে ১৯৪২ সালের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত) — সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর ফ্যাসিস্ট জার্মানির আক্রমণ, যুদ্ধের আয়তন বৃদ্ধি এবং হিটলারের বিদ্যুৎগতির যুদ্ধ (‘ব্লিটসক্রিগ’) নীতির অকৃতকার্যতা।
দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪২ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ১৯৪৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) — যুদ্ধের মোড় বদল, ফ্যাসিস্ট জোটের আক্রমণাত্মক রণনীতির ব্যর্থতা।
তৃতীয় পর্ব (১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৪৫ সালের ৯ মে পর্যন্ত) — ইউরোপে ফ্যাসিস্ট জোটের পরাভব, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূখন্ড থেকে শত্রুবাহিনীর বিতাড়ন, দ্বিতীয় রনাঙ্গন উদঘাটন, নাৎসি দখল থেকে ইউরোপের দেশসমূহের মুক্তি, ফ্যাসিস্ট জার্মানির পূর্ণ পতন এবং তার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।
চতুর্থ পর্ব (১৯৪৫ সালের ৯ মে থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) — সাম্রাজ্যবাদী জাপানের পরাজয়, জাপানি দখল থেকে এশিয়ার জাতিসমূহের মুক্তি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান।
এই সংক্থিপ্ত ইতিহাস গ্রন্থটিতে নির্দিষ্ট উদাহরণের ভিত্তিতে মহাফেজখানা থেকে প্রাপ্ত নতুন ও স্বল্পজ্ঞাত দলিলাদির সাহায্যে, সোভিয়েত এবং বিদেশী রাজনীতিজ্ঞ আর সেনাপতিদের স্মৃতিকথার সহায়তা নিয়ে বর্ণিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলির কাহিনী। বইটিতে নির্দিষ্ট কিছু সামরিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও উপনীত হওয়া গেছে।
এই বইয়ে মোট ২১টি নকশা-মানচিত্র আছে। সেগুলির তালিকা ও সঙ্কেতের অর্থ বইটির শেষে দেওয়া হয়েছে৷
প্রথম অধ্যায় যুদ্ধের আগে
১) জার্মান ফ্যাসিজম — ইউরোপে যুদ্ধের প্রধান জ্বালামুখ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধানোর মূলে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই তারা তাদের আগ্রাসনমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি গড়ে তুলতে আরম্ভ করে। ৩০-এর বছরগুলোতে পৃথিবীতে যুদ্ধের প্রধান উৎস ছিল দু’টি। একটি ইউরোপে— ফ্যাসিস্ট জার্মানি ও ইতালি, অন্যটি দূর প্রাচ্যে— সমরবাদী জাপান।
(ক্রমশ)
Advertisement



