• facebook
  • twitter
Monday, 22 December, 2025

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

চেকোস্লোভাকিয়ার ক্ষতি করে আক্রমণকারীর সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলো যে চুক্তি সম্পাদন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার কঠোর নিন্দা করেছিল।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

১৯৩৬ সালে জার্মানি ও ইতালি একটি সোভিয়েতবিরোধী, তথাকথিত কমিন্টার্নবিরোধী চুক্তি সম্পাদন করে, যাতে জাপানও যোগ দেয়। বার্লিন, রোম ও টোকিওর মধ্যে বৈধ একটি আগ্রাসী সামরিক জোট গড়ে উঠল। ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে হিটলারী সৈন্য বাহিনী অস্ট্রিয়া ‘অন্তর্ভুক্তির’ অজাহাতে ওই দেশটি অধিকার করে নেয়। নাৎসি জার্মানিকে চেকোস্লোভাকিয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ওই বছরেরই ৩৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির প্রতিনিধিরা মিউনিখে এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ইউরোপের পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। এ চুক্তির উদ্দেশ্যটি নিহিত ছিল আগ্রাসকদের আরও অনুপ্রেরণা দেওয়ার এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তাদের প্ররোচিত করার নীতিতে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেন ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ দালাদিয়ের চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে হিটলার আর মুসোলিনির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, ওদের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে খন্ডবিখন্ড করে ফেলার উদ্দেশ্যে ফ্যাসিস্ট জার্মানির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

৩০ সেপ্টেম্বর মিউনিখ ফয়সালার সঙ্গে যুক্ত হয় দ্বিপাক্ষিক ইঙ্গো-জার্মান ঘোষণআপত্র, যা বস্তুত পক্ষে ছিল একটি অনাক্রমণ চুক্তি। ৬ ডিসেম্বর নাৎসি জার্মানির সঙ্গে অনুরূপ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করে ফরাসি সরকার।
চেকোস্লোভাকিয়ার ক্ষতি করে আক্রমণকারীর সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলো যে চুক্তি সম্পাদন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার কঠোর নিন্দা করেছিল। ১৯৩৮ সালের ৪ অক্টোবর ‘প্রাভদা’ সংবাদপত্র লিখেছিল, ‘সমগ্র পৃথিবী, সমস্ত জাতি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে: চেম্বারলেন নাকি মিউনিখে বিশ্ব শান্তি রক্ষা করেছেন, এরূপ সুন্দর সুন্দর কথার আড়ালে এমন একটি কার্য সম্পাদিত হয়েছে, যা নিজস্ব নির্লজ্জতার দিক থেকে প্রথম সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের পরে সংঘটিত সমস্তকিছুকে হার মানায়।’

Advertisement

মিউনিখ চুক্তির নিন্দা করে সমগ্র বিশ্বের জনসমাজ। ১৯৩৮ সালের ৯ অক্টোবর ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় মুখপত্র ‘ইউমানিতে’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল ‘ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেন, চেকোস্লোভাকিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা আর হল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের প্রতিনিধিদের আবেদনপত্র’। তাতে বলা হয় যে ‘মিউনিখে বিশ্ব শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে— মিউনিখের বিশ্বাসঘাতকতা শান্তি রক্ষা করেনি, তা বরং শান্তি ভঙ্গ করেছে, কেননা এই চুক্তি সমস্ত দেশের শান্তিকামী শক্তিসমূহের জোটের উপর আঘাত হেনেছে এবং ফ্যাসিস্টদের তাদের দাবিগুলো এত বেশি কঠোর করতে অনুপ্রাণিত করেছে যে তারা এখন বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়াশীল মহলসমূহের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করছে।’ কমিউনিস্টরা শান্তির সমস্ত সমর্থককে গণতন্ত্রের জন্য, সামাজিক প্রগতি আর জাতিসমূহের স্বার্থ রক্ষার জন্য মহান সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।

ব্রিটেন আর ফ্রান্সের নেতৃবৃন্দের আচরণ মূল্যায়ন করতে গিয়ে মার্কিন ইতিহাসবিদ ফ্রেডারিক শুমান লিখেছেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালীন পর্যায়ে গণতান্ত্রিক জাতিসমূহের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিবৃন্দ যে ধরনের নির্বুদ্ধিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছেন তার সঙ্গে মানুষের দুর্বলতা, নির্বুদ্ধিতা আর মানুষ কৃত অপরাধসমূহের সমগ্র লিখিত ইতিহাসে বর্ণিত কোনকিছুরই তুলনা হয় না।

পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহের সোভিয়েত বিদ্বেষী শাসক মহলগুলো যুদ্ধের দিকে ফ্যাসিস্ট জার্মানির পথ অবারিত করতে গিয়ে নিজেরাই আগ্রাসনের বলিতে পরিণত হয়।

(ক্রমশ)

Advertisement