• facebook
  • twitter
Sunday, 21 December, 2025

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

সুদৃঢ় সামরিক-অর্থনৈতিক ভিত্তি ও বিশাল সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ফ্যাসিস্ট জার্মানি তার আক্রমণাত্মক পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের কাজে মনোনিবেশ করল।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

যেমন, ১৯৩২ সালে অ্যালুমিনিয়াম গালাইয়ের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার টন, আর ১৯৩৯ সাল নাগাদ তা ১ লক্ষ ৯৪ হাজার টন অবধি বৃদ্ধি পায়, এবং এটা ছিল ইউরোপের সমস্ত পুঁজিতান্ত্রিক দেশে উৎপাদিত অ্যালুমিনিয়ামের মিলিত পরিমাণের চেয়েও বেশি। মার্কিন একচেটিয়াদের সহায়তায় জার্মান শিল্পপতিরা ১৯৩৮ সালে কৃত্রিম জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ ১৬ লক্ষ টনে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার সময় জার্মানির ধাতু প্রসেসিং লেদযন্ত্রের পার্কটি ছিল পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ— ১৬ লক্ষটি যন্ত্র। অর্থনীতিকে সামরিকীকরণের ও মেহনতীদের কঠোর শোষণের মাধ্যমে এবং বিদেশী ঋণের কল্যাণে জার্মানি বিপুল সামরিক-শিল্প ক্ষমতা গড়ে তুলে এবং আবার সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে নিজের স্থান করে নেয়। সে যুদ্ধের জন্য, পৃথিবীর পুনর্বন্টনের জন্য জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে জার্মানির সামরিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ২২ গুণ, আর সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা বাড়ে ৩৫ গুণ।
নাৎসিরা রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত মুখ্য পদ নিজেদের করায়ত্ত করে ফেলে এবং তাদের অধীনস্থ সমস্ত জনবহুল সংগঠনের উপর নির্ভর করে দেশকে সরাসরিভাবে সার্বিক যুদ্ধের জন্য সমগ্র প্রস্তুত করে তুলতে থাকে। জার্মান জনগণকে ফ্যাসিজমের সন্ত্রাসবাদী ব্যবস্থার সুবিশাল এক সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে রাখা হয়েছিল। গেস্টাপো, এস-এস, এস-ডি ইত্যাদির মতো সংস্থাগুলো নিয়ে গঠিত এই সন্ত্রাসবাদী ব্যবস্থাটি ছিল অতি জটিল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এক যন্ত্র, যার সাহায্যে সমগ্র জাতিকে জার্মান সাম্রাজ্যবাদের বাধ্য হাতিয়ারে পরিণত করা হচ্ছিল।

Advertisement

সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহের বুর্জোয়া সম্প্রদায়ের বিদ্বেষকে নিপুণভাবে কাজে লাগিয়ে এবং কাল্পনিক সোভিয়েত হুমকির দ্বারা ওদের ভয় দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট নেতারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছিল। হিটলার তার সহাপরাধীদের একবার বলেছিল‘ ‘আমার ভার্সাই চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রসমূহকে ঠেকিয়ে রাখতে হবে… বলশেভিকবাদের ভূতের সাহায্যে, ওদের এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে জার্মানি হচ্ছে লাল প্লাবনের বিরুদ্ধে শেষ দুর্গ। ভার্সাই চুক্তি বিসর্জন দিয়ে আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়া— এই-ই হচ্ছে আমাদের পক্ষে সঙ্কটজনক সময়টি কাটিয়ে উঠার একমাত্র উপায়।’

Advertisement

১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় এল। অব্যবহিত পরেই জার্মান ফ্যাসিজম আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণকারী শক্তি এবং যুদ্ধের প্রধান প্ররোচকের ভূমিকা গ্রহণ করল। ফ্যাসিস্ট একনায়কত্ব বড় বড় পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করছিল এবং বুর্জোয়া শাসনের সবচেয়ে আগ্রাসী ও সন্ত্রাসবাদী রূপ পরিগ্রহ করেছিল।
দেশের আভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে জার্মান ফ্যাসিজম শ্রমিক শ্রেণীর, এবং সর্বাগ্রে তার অগ্রবাহিনী— জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনসমূহের বিলোপ সাধনে লিপ্ত হয়, অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে— এমনকি বুর্জোয়া উদারনীতিকরাও বাদ পড়েনি— দমন করতে থাকে।

বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে জার্মান ফ্যাসিজম তার দিগ্বিজয়ের ও বিশ্বাধিপত্য প্রতিষ্ঠার অপরাধজনক উদ্দেশ্যগুলো সিদ্ধ করতে চেয়েছিল ধাপে ধাপে: প্রথম দখল করতে হবে মধ্য ইউরোপের প্রভূত্বকারী অবস্থান, এর পরে গড়তে হবে আটলান্টিক থেকে উরাল পর্যন্ত বিস্তৃত মহাদেশীয় সাম্রাজ্য, আর তারপরই লাভ করতে হবে বিশ্বাধিপত্য।

সুদৃঢ় সামরিক-অর্থনৈতিক ভিত্তি ও বিশাল সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ফ্যাসিস্ট জার্মানি তার আক্রমণাত্মক পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের কাজে মনোনিবেশ করল।

(ক্রমশ)

Advertisement