• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

নাৎসিরা ঘোষণা করল যে জার্মানরা এবার, অবশেষে, দীর্ঘ প্রত্যাশিত সামরিক সার্বভৌমত্ব, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার স্বাধীনতা অর্জন করল।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

জার্মান সাম্রাজ্যবাদ ১৯১৯ সালের অন্যায্য ভার্সাই শান্তি চুক্তি বাতিল করার অজুহাতে আপন স্বার্থে পৃথিবী পুনর্বন্টনের দাবি তোলে এবং ফ্যাসিজমের মানববিদ্বেষী ভাবাদর্শের ভিত্তিতে ‘নতুন ব্যবস্থা’ গড়তে প্রয়াসী হয়।

Advertisement

হিটলারের নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট পার্টিটি—যা ভণ্ডভাবে নিজেকে ন্যাশনাল-সোশ্যালিস্ট শ্রমিক পার্টি বলে অভিহিত করত—জার্মান জাতির প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খোলাখুলিভাবে যুদ্ধের উগ্রজাতিবাদী স্লোগান দিচ্ছিল, অন্য জাতিদের প্রতি বিদ্বেষ প্রচার করছিল এবং কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর নির্যাতন চালানোর ও শ্রমিক আন্দোলন দমন করার দাবি জানাচ্ছিল। ১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় এসে হিটলারপন্থীরা জার্মানির প্রগতিশীল শক্তিসমূহের উপর এবং সর্বাগ্রে কমিউনিস্টদের উপর অত্যাচার আরম্ভ করে, সমস্ত রকমের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা ধ্বংস করে দেয় এবং জার্মানির বিশ্বাধিপত্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পাগলের মতো প্রলাপ বকতে থাকে।

Advertisement

১৯৩৫ সালে নাৎসি পার্টির কংগ্রেসে জাতিগত ‘বিজ্ঞানকে’ ‘প্রকৃতি আর মানব ইতিহাসের ন্যাশনাল-সোশ্যালিস্ট উপলব্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি বলে’, ‘ন্যাশনাল-সোশ্যালিস্ট রাইখের আইনপ্রণয়নের… ভিত্তি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, আর বর্ণবৈষম্যবাদের প্রধান তাত্ত্বিক অধ্যাপক গ. গুন্টেরকে ওই কংগ্রেসের সিদ্ধান্তক্রমে ‘বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পুরস্কার’ দিয়ে ভূষিত করা হয়।

ফ্যাসিস্টরা কমিউনিজম আর সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘সমগ্র বিশ্বের শত্রু’ বলে অভিহিত করত, আর ‘তৃতীয় সাম্রাজ্য’ জার্মানিকে ‘পাশ্চাত্য সভ্যতার দুর্গ’ বলে ঘোষণা করল। সশস্ত্রীকরণ ও পূর্বাভিমুখে যুদ্ধাভিযান আয়োজনের প্রশ্নে তারা জার্মানিকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের দাবি জানায়। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ১৯৩৫ সালের ১৬ মার্চ ফ্যাসিস্টরা জার্মান সশস্ত্র বাহিনী— ভের্মাখ্ট গঠনের বিষয়ে এবং বাধ্যতামূলক সর্বজনীন সৈনিক বৃত্তি চালুকরণের বিষয়ে একটি আইন পাস করে, দেশকে দ্রুত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করার উদ্দেশ্যে উঠে পড়ে লাগে। অল্পকাল পরেই, ১৯৩৫ সালরে ২১ মে, ফ্যাসিস্ট সরকার ‘সাম্রাজ্য প্রতিরক্ষা বিষয়ক’ একটি আইন গ্রহণ করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্তও গোপন রাখা হয়। তাতে যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে, তা আরম্ভ ও পরিচালনা কালে সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কর্তব্য নির্ধারিত হয়েছিল। আইনটি হিটলারকে দিল দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তনের বিষয়ে, ব্যাপক সৈন্যযোজনের বিষয়ে এবং যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। ন্যুরেমবার্গ মোকদ্দমায় প্রতিরক্ষা বিষয়ক আইনটি যুদ্ধের জন্য নাৎসি জার্মানির সমগ্র প্রস্তুতির ভিত্তি বলে বর্ণিত হয়।

জার্মানিকে আগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণতকরণের উদ্দেশ্যে জার্মান ফ্যাসিস্টদের অতি দ্রুত ও উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিয়াকলাপের চরম সীমা ছিল ফ্যাসিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেস, যা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই কংগ্রেসটি ‘মুক্তির পার্টি কংগ্রেস’ বলে অভিহিত হয়, আর ১৯৩৫ সালকে ঘোষণা করা হয় ‘স্বাধীনতা বর্ষ’ বলে। নাৎসিরা ঘোষণা করল যে জার্মানরা এবার, অবশেষে, দীর্ঘ প্রত্যাশিত সামরিক সার্বভৌমত্ব, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার স্বাধীনতা অর্জন করল।

(ক্রমশ)

Advertisement