প্রশ্ন: ‘আড়ি’ ছবির নামটা কিন্তু বেশ! দাম্পত্যে আড়ি আর ভাব কোনটা বেশি চলে?
যশ-নুসরত: দুটোই চলে। সারাজীবন এমনই চলে। আড়ি ছাড়া ভাব হয় না, আবার ভাব ছাড়া আড়ি হয় না। দুটোরই সমতা রেখে চলতে হয়। এটাই জীবন।
প্রশ্ন: ‘আড়ি’ শব্দটার মধ্যে বেশ মিষ্টি একটা ব্যাপার আছে। ভাব-আড়ির মধ্যে আড়ি না হলে কতটা টান সেটা বোধহয় বোঝা যায় না?
যশ-নুসরত: আড়ি শব্দটা মিষ্টি। সিনেমার নাম কি হতে পারে সেটা নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করছিলাম যশই প্রথম বলে ‘আড়ি’ নামটা কেমন হতে পারে? আর একবারেই মনে ধরে গেল নামটা। এতো সুন্দর মিষ্টি একটা নাম এবং গোটা শৈশব আমাদের কেটে গেছে আড়ি-ভাব করতে করতে। সেই মিষ্টতাই কিন্তু এই সিনেমাতেও রয়েছে। এক্ষেত্রে নামটাও একদমই পারফেক্ট।
প্রশ্ন: যশের কাছে প্রশ্ন রাখব। এই ছবি ওয়াইডি ফিল্মস প্রযোজিত, আগে নায়ক যশকে দেখতাম ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে যেত। তার যে প্রচার সেটা আলাদা। কিন্তু এইবারের যে যাত্রা, যে দায়িত্ব সেটা কেমন লাগছে?
যশ-নুসরত: প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে যদি বলতে হয় প্রযোজনা কিন্তু মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। কারণ অভিনেতা হিসেবে যখন আমরা কাজ করি তখন আমাদের কাজ থাকে শুধু অভিনয় করা। কিন্তু প্রযোজক হিসেবে প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের সব কিছু দেখতে হয়। প্রত্যেকটা টিমকে দেখতে হয়। শিল্পী হিসেবে আমরা আগে জানতাম না এই ডিপার্টমেন্টগুলোও আছে। কিন্তু প্রযোজক হিসেবে আমরা জেনেছি এগুলোও হয়, এভাবে মিক্সিং হয়। শিল্পী হিসেবে এসব ভাবতে হয়নি। এখন নতুন জিনিস শিখতেও পারছি, ভালোও লাগছে। কাজের স্ট্রেস অবশ্যই আছে। কিন্তু কাজটা করতে যেহেতু ভালোবাসি, এই ইন্ডাস্ট্রিতে খেটে খেয়েছি এতো বছর, তাই যতই চাপ আসুক কাজটা করতে ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: আড়ি তো একটা মা—ছেলের গল্প এবং এর মধ্যে তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। ২৫ এপ্রিল জিৎ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘আড়ি’ মুক্তি পাবে। বাংলা বছর অনুযায়ী ধরলে নতুন একটা আমেজ কিন্তু দেখা যাচ্ছে। শুরু হচ্ছে পুরাতন দিয়ে, মধ্যিখানে আড়ি আর শেষ হচ্ছে বস দিয়ে। পর পর তিনটি ছবি পুরাতন, আড়ি এবং বস-এর মুক্তি যেন সুন্দর একটা ছন্দ তৈরি করেছে। এরমধ্যে পুরাতন মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। এবার দ্বিতীয় আড়ি-তে এই যে একসঙ্গে কাজ করা আর একটা বিশেষ চরিত্রে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়কে নেওয়া, এই ভাবনা কিভাবে এলো?
যশ-নুসরত: আমরা আগে সত্যিই ভাবিনি এই তিনটি ছবি এভাবে পরপর মুক্তি পাবে। এটা হয়তো ভগবানেরই ইচ্ছে। আর কাকতালীয়ভাবে এই তিনটি ছবি ‘মা’-কে কেন্দ্র করে। মায়েদের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কিন্তু নানারকম হতে পারে। আর এই তিনটে ছবি কিন্তু তিনরকমের গল্প বলছে। আর কাকতালীয়ভাবে এটাও কিন্তু একটা বিষয় যে তিনটে ছবিতেই মায়েদের চরিত্রে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা বঙ্গতনয়া এবং তিনজনই তাঁদের নিজেদের ক্ষেত্রে লেজেন্ড। বাংলা সিনেমার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বলা যায়।
প্রশ্ন: তিনজনেই একটা বৃত্ত পূর্ণ করেছে বলে মনে হচ্ছে না?
যশ-নুসরত: মনে হয় না কোনো প্রযোজক এটা প্ল্যান করে করেছে। এটা হয়ে গেছে। এটা একটা ভালো ব্যাপার। বাংলা সিনেমায় এই জোয়ার আসাটা দর্শকদের কাছে বড়ো পাওনা।
প্রশ্ন: বিষয়বস্তুর জোরেই আবার হলমুখী হবে বাংলা ছবির দর্শকরা। এই বিষয় কি বলবে?
যশ-নুসরত: এটাই হওয়া উচিত। ওঁদের কাজ এতো ভালো। এতদিন ধরে দর্শকরা এই তিন অভিনেত্রীকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, সেখানে যখন তাঁরা বাংলা সিনেমায় ফিরে আসছেন তখন আমরা একশো শতাংশ আশাবাদী যে দর্শকরা তিনটি ছবিতেই হলমুখী হবেন।
প্রশ্ন: মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তোমাদের কাজ করার নিশ্চয় দারুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, কেমন লেগেছে?
যশ-নুসরত: প্রথমত, এটাই বলব তাঁর সঙ্গে স্ক্রিন স্পেস ভাগ করা এবং অভিনয় করতে পারার সুযোগ আমাদের কেরিয়ারে একটা বড়ো সুযোগ। আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের গোটা টিম তাঁকে পেয়ে খুব খুশি। আমাদের পর্দার পিছনে রসায়ন এতো ভালো ছিল যে অনস্ক্রিন আলাদা করে তৈরি করতে হয়নি।
প্রশ্ন : ট্রেলারে মা-ছেলের মধ্যে একটা সুন্দর রসায়ন দেখা গিয়েছে, সেই নিয়ে কি বলবে?
যশ-নুসরত: এই রসায়ন দেখা গিয়েছে কারণ, যখন প্রথম আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে যাই তখন মাথায় ছিল একজন ‘লিভিং লেজেন্ড’-এর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। আমাদের জন্মের আগে থেকে তিনি অভিনয় করছেন। জেনারেশনের পর জেনারেশন দর্শকরা তাঁর ফ্যান।
প্রশ্ন: ছবিতে যে সারা জীবনের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তো এইরকম সম্পর্ক খুব কম দেখা যায়। সেই নিয়ে তোমাদের কি মত?
যশ-নুসরত: সম্পর্ক তো জীবনভরই থাকা উচিত। আমরাই সম্পর্ককে জটিল করে ফেলি এবং সেটা আজকের সময় দাঁড়িয়ে যখন আমরা ব্যস্ত হয়ে গেছি, অন্যরকম হয়ে গেছি, সেখানে সম্পর্কের যে গভীরতা আছে, যে অর্থ আছে সেটা আমরা হারিয়ে ফেলছি। সেটাকে আর ধরে রাখতে পারছি না। তাই এমন একটা সাধারণ গল্প বলার চেষ্টা করছি যেটা দেখে দর্শকরা বুঝতে পারবেন সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকার জন্য। কতটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা পড়াটা। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করার চেষ্টা করেছি যাতে মানুষের মনে এটা পৌঁছে যায়।
প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে নতুন একটা স্বাদ এসেছে। আড়ি সিনেমা নিয়ে দর্শকদের তোমরা কি বলবে?
যশ-নুসরত: এই ছবিতে একটা আবেগপূর্ণ আঙ্গিক আছে। আমাদের দু’জনের পক্ষ থেকেই সব বাবা-মায়েদের জন্য এটা একটা শ্রদ্ধাঞ্জলি। সকলকে অনুরোধ করছি সপরিবারে শুধু নয় নিজেদের বাবা-মাকে নিয়ে সিনেমাটি দেখতে যাবেন। এই ছবিটা এটা ভেবেই বানানো হয়েছে যে আমরা আজকের দিনে যেভাবে কাজের পিছনে ছুটি সেক্ষেত্রে অনেকসময় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমরা বাবা-মাকে অবহেলা করে ফেলি। এই ছবিটা তাঁদের জন্য একটা উপহার। এটা দেখে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁদের যে দূরত্ব তা হয়তো একটু কমবে। কাজের মধ্যে একটু তাঁদের জড়িয়ে ধরা যাবে। আর যাঁদের বাবা-মা বেঁচে নেই তাঁরা হয়তো এই ছবিটা দেখে নিজেদের পুরানো স্মৃতিগুলোকে মনে করবে।