ভাটপাড়ায় শোক মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্র

নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া। এবার শােক মিছিলকে ঘিরে। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটপাড়া।

Written by SNS Barrackpore | June 22, 2019 10:50 am

উত্তপ্ত ভাটপাড়ায় বিক্ষোভ রুখতে উপস্থিত ছিল র‍্যাফ, পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স। (Photo: IANS)

নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া। এবার শােক মিছিলকে ঘিরে। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটপাড়া।

বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে নিহত দু’জনের দেহ নিয়ে শুক্রবার বিকেলে শােক মিছিল বার করে বিজেপি। তখন পৌনে ৫ টা। কয়েক হাজার লােক মিছিলে হাঁটছিলেন। মৃতদেহ মাঝ রাস্তায় নামিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী। কাছারি রােডের দিকে মিছিল এগােতেই পুলিশ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।

পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স ও র‍্যাফকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে উত্তেজিত জনতা। জওয়ানদের দিকে লাঠি-রড নিয়ে তেড়ে যায় জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এলাকার সাংসদ অর্জুন সিং, বিধায়ক পবন সিং, সুনীল সিং, পুরপ্রধান সৌরভ সিং সহ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এর পরই শােক মিছিল ধীরে ধীরে কাছারি রােড থেকে ভাটপাড়া হয়ে শ্মশানের দিকে এগিয়ে যায়। ভাটপাড়া মুক্তাপুর শ্মশানঘাটে ওই দুই ব্যক্তির সৎকার করা হয়।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া। বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা কিশাের রােহিত সাউ ওরফে রামবাবু ও এক জুটমিল কমী ধর্মবীর সাউ। এদিন ওই দুজনের দেহ নিয়ে মিছিলের পরিকল্পনা করে বিজেপি। মিছিল শুরু হওয়ার আগেই এলাকায় ঢােকে বারাকপুর কমিশনারেটের একটি দল। পুলিশ প্রস্তাব দেয়, অশান্তি এড়াতে বিধায়ক ও সাংসদদের ছাড়া মিছিল করা হােক। কারণ তাঁরা থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের। এরপরই উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা।

প্রকাশ, বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ায় একটি থানা উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু তার আগে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গােটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ভাটপাড়া মােড়ে শ্রমিকদের বসতিতে আচমকাই বােমাবাজি শুরু হয়। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, বােমাবাজিও ততই বেড়েছে। সকালে প্রায় ঘন্টা দেড়েক মুড়ি-মুড়কির মতাে বােমা পড়েছে। সঙ্গে চলেছে গুলিও। ফাটানাে হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। এলাকায় নামানাে হয় র‍্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। ভাটপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দু’জন।

এদিন এর প্রেক্ষিতেই সকাল থেকেই কার্যত বনধের চেহারা নেয় ভাটপাড়া ও কঁকিনাড়া অঞ্চল। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় মানুষজনও বেশি ছিল না রাস্তাঘাটে। এরই মধ্যে ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় কাঁকিনাড়া বাজারে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি কাঁকিনাড়া বাজারে একটি দোকান লক্ষ্য করে বােমা ছেড়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত বােমাটি ফাটেনি। বােমা পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। খবর দেওয়া হয় বম্ব স্কোয়াডকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সকালে বাইকে করে এসে কাঁকিনাড়া বাজারে একটি দোকান লক্ষ্য করে বােমা ছুঁড়ে পালিয়ে যায় দু’জন দুষ্কৃতী। তবে বােমাটি শুক্রবার সকালে ছোঁড়া হয়েছে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দে পুলিশ। ডেপুটি কমিশনার অজয় ঠাকুরকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বেই বৃহস্পতিবার গুলি চালানাে হয়। যদিও এঘটনায় ইতিমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায় তদন্ত ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা জানা গিয়েছে।

প্রকাশ, এই সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাংসদ অর্জুন সিংয়ের নেতৃত্বে শুক্রবার ভাটপাড়া থানা ও বারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনারের অফিস ঘেরাও করে বিজেপি। অর্জুনের অভিযােগ, পুলিশের গুলিতেই কঁকিনাড়ায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। পরে কমিশনারের কাজে একটি স্মারক লিপিও জমা দেয় বিজেপি সাংসদ। তিনি এদিন জানান, পুলিশের বিরুদ্ধেই পুলিশকে অভিযােগ জানলাম।

গত মাসের ১৯ তারিখ থেকে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তবে তা সাধারণ মানুষের জন্য। কামরাহাটি থেকে দুষ্কৃতী আসছে ও বােমাগুলি চালিয়ে চলে যাচ্ছে। সিপিকে বলেছি দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার না করলে আন্দোলন চলবে। যদিও ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র ও বােমা।

প্রসঙ্গক্রমে, বৃহস্পতিবার রাতে নিহত রামবাবু এবং ধরমবীর সাউয়ের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন বারাকপুর সাংসদ অর্জুন সিং। নিহতদের পরিবারের পাশে গেরুয়া শিবির রয়েছে বলেই আশ্বাস দেন তিনি। পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘােষণা করেন সাংসদ।