চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে-বাঘ প্রসঙ্গ উঠলেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি প্রথমেই মাথায় আসে। ভয়-ভীতি মেশানো বাঘের সঙ্গে আমাদের চিরকালীন একটা ভালোবাসাও রয়েছে। সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে বাঘের দর্শন হল না এর থেকে মন খারাপের আর কিছু হতে পারে। শীতের মরসুমে সুন্দরবন ঘুরে দেখা ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির প্রথম পছন্দ। আর এই শীতের মরসুমেই দু’দিন বন্ধ থাকছে সুন্দরবন।
আগামী ১১ ও ১২ ডিসেম্বর পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকছে সুন্দরবনে জলপথে ভ্রমণ। বোট বা লঞ্চে জঙ্গলে প্রবেশ করা যাবে না। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের তরফে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।তাতে জানানো হয়েছে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর বাঘশুমারির প্রথম পর্যায়ের কাজ চলবে। সেই কারণে পর্যটন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সুন্দরবনে শুমারি চালানো হয়। জঙ্গলের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো, বাঘের পায়ের ছাপ সংগ্রহ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক চিহ্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই কাজ করা হয়। এ বছর শুমারির প্রথম পর্যায় শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। পর্যটকদের যাতায়াত এবং শব্দদূষণের জন্য বাঘশুমারির কাজ বিঘ্ন হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই জঙ্গল ওই দুই দিন পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
Advertisement
১১ এবং ১২ ডিসেম্বর অনলাইন বুকিংও বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিনস জানিয়েছেন, ‘সুষ্ঠুভাবে বাঘ গণনা করার জন্যই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। যাতে সঠিকভাবে বাঘের পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এবার বাঘের পরিসংখ্যান অনেকটাই বাড়বে।‘
এবার সুন্দরবনের বিভিন্ন জঙ্গলে মোট ১৪৮৪টি ক্যামেরা বসানো হবে। ৪১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সারাক্ষণের গতিবিধি নজরবন্দি করবে এই ক্যামেরা। একমাসের বেশি সময় ধরে ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যমে এই বাঘ গণনার কাজ চলবে। শুধু বাঘের গতিবিধি নয়, খাদ্যের জোগান কেমন, তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। জঙ্গলে হরিণ, বন্য শুকর-সহ অন্যান্য প্রাণীর উপস্থিতিও পর্যালোচনা করা হবে। এবারই প্রথম এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে খবর। এই কাজের জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে বলে খবর।
ওই দুই দিন সুন্দরবনের যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর বোট মালিক ও ট্যুর অপারেটরদের কপালে ভাঁজ। অনেকেরই ওই দুইদিনের আগাম বুকিং ছিল। বুকিং বাতিল হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের। সুন্দরবন বোটমালিক সংগঠন জানিয়েছে, বুকিং বাতিল করা হয়েছে এবং পর্যটকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আর্থিক ক্ষতি হলেও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণ রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছেন বোটমালিক ও ট্যুর অপারেটররা। বাঘশুমারির কাজ যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেই আশাই এখন সুন্দরবনবাসীর। প্রতি চার বছরে একবার সুন্দরবনে বাঘশুমারি হয়। তবে ছোট ছোট অঞ্চলভিত্তিক পর্যবেক্ষণ বা প্রাথমিক গণনা প্রায় প্রতি বছরই হয়। এ বছর ডিসেম্বরে হচ্ছে প্রথম পর্যায়ের কাজ।
Advertisement



