পরিযায়ী শ্রমিকদের অনুদান, ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী হেনস্থায় শাস্তির নিদান মমতার

মমতা পরিযায়ী শ্রমিক, পর্যটক এমনকী চিকিৎসা করতে গিয়ে ভিনরাজ্যে আটকে পড়া মানুষজনকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে স্বস্তি দিলেন।

Written by SNS Kolkata | April 16, 2020 5:31 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

নিজেকে রাফ অ্যান্ড টাফ বলেই পরিচয় দিতে ভালোবাসেন মমতা। বুধবারও নবান্নে বললেন আমি রাজনীতিকের থেকেও মানবিক হতেই বেশি পছন্দ করি। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে কঠোর এবং কোমল দ্বৈত ভূমিকাতেই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি একদিকে পরিযায়ী শ্রমিক, পর্যটক এমনকী চিকিৎসা করতে গিয়ে ভিনরাজ্যে আটকে পড়া মানুষজনকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে স্বস্তি দিলেন। অন্যদিকে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীজের হেনস্থা করলে কড়া শাস্তি বিধান দিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, করোনার চিকিৎসা করায় ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকেই হেনস্থার মুখে পড়েছেন। অনেককে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মধ্যপ্রদেশে এক ডাক্তারকে দেখলাম করোনার চিকিৎসা করেছেন বলে তাকে আবাসনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গাড়িতেই থাকতে হয়েছে। এই রাজ্যে রানাঘাটের বাসিন্দা বেলেঘাটা আইডি’র একজন নার্স ও তার পরিবার সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছেন। নিজের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাকে।

মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই ধরনের ব্যবহার যারা করছেন, সরকার চাইলে তাদের জেলে ভরতে পারে। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, এই অবস্থা আপনাদের বাড়িতে এরকম অসুখ হলে তখন কী করনে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ওই নাস, তার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বোন এবং মাকে আমরা সরকারি আবাসনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরকম স্পেশাল কেস এলে আমরা আবার সিদ্ধান্ত নেব। এর আগেও বর্ধমানের এক করোনা চিকিৎসক ডাক্তারকে বাড়িওয়ালা বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ডাক্তারদের হেনস্থা করলে বরদাস্ত করা হবে না।

করোনা আক্রান্তদের সৎকারে বাধা দেওয়ারও সমালোচনা করেন মমতা। জামুরিয়াতে ইয়ুথ হস্টেলে কোয়ারেন্টাইন করতে বাধা দিয়ে স্থানীয় ওসিকে আহত করে তার পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মমতা এদিন কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, এই ধরনের কোনও অমানবিক কাজ হলে শাস্তিবিধান করা হবে। করোনা চিকিৎসায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার। তাদের প্রতি মানকি হোন।

পাশাপাশি ডাক্তার নার্স, প্যারা মেডিকেল কর্মীদের ভালো রাখার জন্য তাদের সাতদিন কাজ এবং সাতদিন বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ তাদেরও ভালো করে এক নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে, এই দায়িত্ব দিয়েছে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে। এই সঙ্গে পুলিশের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক বিশ্রাম না দেওয়া গেলেও দিনে ছয় থেকে আট ঘন্টার মতো ডিউটি আওয়ার্স রাখা যায় কিনা সেকথা বিবেচনা করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুধবার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভিনরাজ্যে আটকে পড়া মানুষদের নিয়ে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে চিকিৎসা করতে গিয়ে ভেলোর, মুম্বই, চেন্নাই এমনকি দিল্লিতেও অনেকে আটকে পড়েছেন। আমরা ভিনরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তাদের অল্প কিছু টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা প্রয়োজনীয় খাবার কিনে খেতে পারেন। মুম্বইতে কথা বলেছি, দিল্লিতে কথা বলেছি। সেখানে আটকে পড়া পরিবারগুলোকে আমাদের সরকারের তরফে কিছু টাকা পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বান্দ্রার ঘটনার সমালোচনা করে বলেন, কেউ তাদের বিভ্রান্ত করেছিল, সেজন্যই তারা গণপরিবহণ চেয়ে সেখানে চলে গিয়েছিল। এদিন মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন, যাদবপুর থেকে একটা গ্রুপ বৃন্দাবনে বেড়াতে গিয়ে সেখানে আটকে পড়েছিল। ইমেল মারফত সেই খবর পেয়ে উত্তরপ্রদেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তাদের জন্য ৫০ কেজি চাল, ১৫ কেজি ডাল, ২৫ কেজি আনাজ এবং ১০ লিটার তেল পাঠানো হয়েছে।