শেষ দফাতেও অশান্তি, হিংসা এড়াতে পারল না কমিশন

রবিবার শেষ দফায় নয়টি কেন্দ্রের নির্বাচনেও অশান্তি আর হিংসা এড়াতে পারল না নির্বাচন কমিশন। বােমাবাজি, লাঠিচার্জ, প্রার্থীদের আক্রান্ত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিনের ভােট পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত।

Written by Subir Mukherjee Kolkata | May 20, 2019 7:17 pm

বারাসাতে বিজেপি শিবিরের ধ্বংসাবশেষ (Photo: IANS)

রবিবার শেষ দফায় নয়টি কেন্দ্রের নির্বাচনেও অশান্তি আর হিংসা এড়াতে পারল না নির্বাচন কমিশন। বােমাবাজি, লাঠিচার্জ, প্রার্থীদের আক্রান্ত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিনের ভােট পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। আর ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনে ব্যাপক বােমাবাজির ঘটনা নয়টি লােকসভা নির্বাচনকে ছাপিয়ে যায়।

এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রণক্ষেত্রের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের কাছে রিপাের্ট তলব করেন উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। অবিলম্বে ঘটনা নিয়ে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। সাতশাে দশ কোম্পানি বাহিনী মােতায়েন থাকা সত্ত্বেও কেন শেষ দফায় এত অশান্তি তা পর্যবেক্ষকদের কাছে জানতে চান ক্ষুব্ধ উপনির্বাচন কমিশনার।

রবিবার শেষ দফার ভােটে একশাে শতাংশ বুথে আধা সামরিক বাহিনী মােতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাত সকালেই ভাটপাড়া, কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপক গােলমালের খবর আসতে শুরু করে। ভাটপাড়ায় পুলিশের গাড়ি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব অবশ্য দাবি করেছেন দু একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভােট শান্তিতেই হয়েছে।

কমিশনসূত্রে খবর, নয়টি লােকসভা এবং চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে যথাক্রমে গড় ভােটের হার ছিল ৭২.৯১ এবং ৬৭.২৬ শতাংশ। নির্বাচনী কাজে গাফিলতির দায়ে এদিন বারুইপুরের ২৫১, ফলতার ১৮১ এবং ডায়মন্ডহারবারের ৮৯ নম্বর বুথের পােলিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ইভিএম বিভ্রাট্রের ঘটনায় ভােট বিলম্বের ঘটনা ঘটে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় ভােটপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়েছে বলে কমিশনকর্তারা দাবি করেছেন।

কমিশনসূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ দফার নির্বাচনে বােমাবাজি এবং হিংসাত্মক ঘটনার জেরে দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একটি ভাটপাড়ায় পুলিশের অন্যটি যাদবপুরে এক প্রার্থীর গাড়ি। গােলমালের দায়ে মােট ৩৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর শেষ দফাতেই কমিশনের কাছে মােট ৩৪৯৭টি অভিযােগ জমা পড়ে।

পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, ভাটপাড়া থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে এদিন দুপুরেই পােস্তা বাজারের কাছে বােমাবাজির ঘটনায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই দুষ্কৃতী বােমা ছুঁড়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযােগ। ঘটনার খবর পেয়েই বাহিনীর লােকেরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। ভােটে গােলমাল পাকানাের দায়ে নওদাখালিতে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে নির্বাচন কমিশন।

আগমী ২৩ তারিখে ভােট গণনা আর এই গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআরপিএফ জওয়ানদের। শুধু মাত্র স্ট্রং রুমের পাহারা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আধাসেনা মােতায়েন থাকবে। মােট ৮২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মােতায়েন রাখার কথা জানিয়েছেন আইজি (আইন শৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা।

এদিন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযােগ উঠেছে। বিরােধীদের দাবি নাকচ করে দিয়ে আইজি (আইন শৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানিয়েছেন, কাউকে কোনও গৃহবন্ধি করে রাখা হয়নি। বিরােধীদের অভিযােগ, রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশ কেন্দ্রীয় বাহিনী এদিন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

যাদবপুর, গাঙ্গুলিবাগান, ডায়মন্ডহারবার, বসিরহাট কেন্দ্রে একাধিক বুথে অশান্তির ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানায় সিপিএম এবং বিজেপির প্রতিনিধিরা। সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পুরােপুরি কাজে লাগানাে হয়নি। তিনি যাদবপুর এবং বিশেষ করে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ৩১৯টি বুথ নিয়ে অভিযােগ করেন। তিনি বলেন, বসিরহাটের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বুথে বামেদের পােলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। সকলের কাছে অভিযােগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে না লাগানাের জেরে শেষ দফার নির্বাচনে ব্যাপক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন রবীনবাবু।

বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। আর সেকারণে এই দলের স্বীকৃতি বাতিল করা উচিত। শেষ দফার নির্বাচন নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ডায়মন্ড হারবার, উত্তর কলকাতা, বসিরহাটে ব্যাপক বুথ দখলের চেষ্ঠা হয়েছে। এর মধ্যেও জনগণ সাহসের সঙ্গে ভােটাধিকার প্রয়ােগ করেছেন এবং বুথ দখলের চেষ্টা প্রতিরােধ করেছেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক বুথে পুনরায় ভােটগ্রহণের দাবি তুলেছেন সূর্যবাবু। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের অভিযােগ, যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার বিজেপি তৃণমূলকে ছেড়ে দিয়েছে। বিনিময়ে মথুরাপুর তৃণমূল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বিজেপিকে।