যষ্ঠ দফার নির্বাচনেও ব্যাপক হিংসা এবং অশান্তি ঘটনা ঘটল। যাদের নিয়ে আশঙ্কা ছিল, সেই মাওবাদীরা এদিন কোনও ঘটনা ঘটালেও রবিবার আট কেন্দ্রর নির্বাচনে ব্যাপক অশান্তি এবং হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। বােমা, লাঠিচার্জ, গুলি কোনওটাই বাদ যায়নি এই দফার নির্বাচনে। আর এই সবকিছু নিয়েই ষষ্ঠ দফার নির্বাচনী পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত।
বােমা, গুলি, ভাঙচুর এবং লাঠিচার্জের ঘটনায় মােট ২৬ জন জখম হয়েছেন। এঁদের মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রবিবার যেসমস্ত কেন্দ্রের নির্বাচন ছিল, সেগুলি হল- তমলুক, কাথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। কিন্তু এই সমস্ত কেন্দ্রের মধ্যে সব থেকে ব্যাপক গােলমালের ঘটনা ঘটেছে মেদিনীপুরের ঘাটালে।
Advertisement
কমিশনের মতে, এখানে দফায় দফায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। ঘাটাল কেন্দ্রে সকলের নজর ছিল প্রাক্তন পুলিশ অফিসার এবং বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘােষের দিকে। তিনি বিজেপির প্রার্থী। কমিশনের সারাক্ষণ নজরে ছিলেন তিনি।
Advertisement
এদিকে কমিশনের নির্দেশে ভােটের পরেই বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এসকে অপসারিত করা হয়েছে। এই নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, সিআইএসএফ জওয়ানরা পাঁচ জায়গায় গুলি চালিয়েছে। এর মধ্যে ভারতী ঘােষের দেহরক্ষীরাও গুলি চালিয়েছে।
দাঁতনে তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে বাপক সংঘর্ষে মােট সাতজন জখম হয়েছেন। যদিও সিআইএসএফ-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শূন্যে তারা গুলি চালিয়েছেন। সিআইএসএফের এই যুক্তি অবশ্য মানতে নারাজ কমিশনের কর্তারা। গুলি চালানাের ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি এবং সিপিএমের পক্ষ থেকে ঘাটালসহ একাধিক কেন্দ্রের পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
কমিশনকর্তারা জানিয়েছেন, সবং, দোগাছিয়া, ঘাটাল গােপীবল্লভপুর, ময়না, বিষ্ণুপুরের কলাবাগানে সিআরপিএফ জওয়ানরা চার রাইড গুলি চালিয়েছে। কেন এই ঘটনা আর ঘাটালেই বা কেন এত অশান্তি? তা জানতে দিল্লি থেকেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাবকে ফোন করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। ঘাটালের অশান্তির ঘটনা নিয়ে ভিডিও ফুটেজ দিল্লিতে চেয়ে পাঠানো হয় কমিশন কর্তাদের তরফে।
চতুর্থ এবং পঞ্চম দফার নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু রবিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে তা ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নির্বাচন হলেও কেন এত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটল, স্যোপারে অবশ্য কমিশন কর্তারা কোনও জবাব দিতে পারেননি। বিরােধীদের দাবিমতে, এই দফার নির্বাচনে একশাে শতাংশ বুথে আধাসামরিক বাহিনী মােতায়েন করা হয়েছিল। সমস্তু বুথে সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কুইক রেসপন্স টিম রাখা হয়েছিল। সাতশাে কোম্পানি মােতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুই কাজে আসেনি।
ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলেও ঘাটাল ছাড়া ভোট শান্তিতে হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে। গোলমাল এক অশান্তির দায়ে বিজেপির দুই প্রার্থী ভারতী ঘোষ এবং দিলীপ ঘােষ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভারতী ঘােষের বিরুদ্ধে অভিযােগ তিনি বুথের একশাে মিটারের মধ্যে সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে গিয়েছিলেন। সেকারণে তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
কমিশনের মতে কোনও প্রার্থী মােবাইল দিয়ে বুথের ধারেকাছে ঘেসতে পারবেন না। প্রাক্তন এই পুলিশকর্তা বুথের মধ্যে মােবাইল নিয়ে ভিডিওগ্রাফি করার দায়ে রিপাের্ট তলব করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে এই বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন।
শালবনি এবং সুতাহাটায় ইভিএম, ভিভিপ্যাট খারাপ করার জন্য আরও একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয় কমিশন। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের বক্তব্য, নির্বাচন কাজে গাফিলতির জন্য কেশপুরের ২০৬ এবং ২০৭ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভােটগ্রহণকে কেন্দ্র করে দোগাছিয়ায় কম অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।
ঝাড়গ্রামে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু নিয়ে রুণক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কেশপুরে। রাজ্য পুলিসের আইজি (আইন শৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানিয়েছেন, আটটি কেন্দ্রের নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। মােট পনেরটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মােট ১৬ জনকে সুনির্দিষ্ট অভিযােগের ভিত্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাত পর্যন্ত মােট পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। পরে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি। সিআরপিএফ জওয়ানদের গুলিতে একজন জখম হয়েছেন। ঝাড়গ্রামে একজনকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। কমিশনের তরফে জানানাে হয়েছে, ময়নাতদন্তের পরেই পুরাে বিষয়টি জানা যাবে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত দেশের মধ্যে এই রাজ্যে সর্বোচ্চ ভােট পড়েছে ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। আটটি কেন্দ্রের নির্বাচনে গড় ভােটের হার ছিল ৭৯.৯৩ শতাংশ।
Advertisement



