• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাৎসি পার্টির নুরেনবার্গ কংগ্রেস যুদ্ধ প্রস্তুতির লক্ষ্যে জার্মানির অর্থনীতির পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য একটা চারসালা পরিকল্পনা অনুমোদন করে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

কংগ্রেসটিতে খোলাখুলিভাবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের দ্রুত বর্ধমান সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা হয়, যুদ্ধের প্রস্তুতির স্বার্থে জার্মানির জনগণকে ভাবাদর্শগত ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে তৈরি করে তোলার জন্য বিশাল প্রচারমূলক ক্রিয়াকলাপ চালানো হয়। ১৯৩৬ সালে নাৎসিরা স্বাক্ষরিত সমস্ত চুক্তি অমান্য করে রাইন অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করে এবং আবার ফ্রান্সের সীমান্তে গিয়ে হানা দেয়।

Advertisement

এইভাবে, জার্মানিতে ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় এসে দেশটিকে আন্তার্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রধান আক্রমণকারী শক্তিতে পরিণত করে, এবং সে শক্তি সর্বাগ্রে চালিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। সার্বিক সামরিকীকরণের এবং বিশ্বাধিপত্য লাভের ফ্যাসিস্ট কর্মসূচিটি কেবল সোভিয়েত ইউনিয়ন দখলের পরিকল্পনাগুলোতেই সীমিত ছিল না, তা ব্রিটেন, ফ্রান্স আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বিপদ ডেকে আনছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষোক্ত দেশসমূহের শাসক মহলগুলো সোভিয়েত দেশের প্রতি তাদের চিরাচরিত শ্রেণীগত বিদ্বেষ বশত ‘অহস্তক্ষেপ’! আর ‘নিরপেক্ষতা’ নীতির আড়ালে থেকে প্রকৃতপক্ষে ফ্যাসিস্ট জোটের রাষ্ট্রগুলেকে আগ্রাসনে উৎসাহ দানের নীতিই অনুসরণ করে। জার্মানির সামরিক অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তা করে পশ্চিমের দেশগুলোর পুঁজিপতিদের কাছ থেকে, বিশেষত মার্কিন একচেটিয়াদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পুঁজি আর ঋণ। ওদের কল্যাণে ৩০-এর বছরগুলোর শেষ ভাগে ফ্যাসিস্ট জার্মানির সামরিক শিল্পের মান একসঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্পের মিলিত মানের চেয়েও অধিকতর উচ্চে উপনীত হয়। ইতালি আর জাপানও নিজ নিজ অর্থনীতিকে যথেষ্ট সামরিকীকৃত করে তোলে।

Advertisement

তাছাড়া পশ্চিমী দেশগুলো ফ্যাসিস্ট জার্মানিকে স্ট্র্যাটেজিক কাঁচামাল দিয়ে সাহায্য করেছিল। যেমন, ১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশিষ্ট জার্মান শিল্পপতি শাখ্ট তৃতীয় রাইখের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রীর পদে আসীন থাকা কালে ফরাসি সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার শর্ত অনুসারে ফ্রান্স জার্মানিকে বছরে সাড়ে তিন শো কোটি মার্কেরও বেশি মূল্যের লৌহ আকরিক সরবরাহ করতে বাধ্য ছিল। জার্মানিতে বক্সাইট আমদানির পরিাণও ৬ গুণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে জার্মান ফার্মগুলো বিমান নির্মাণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ফেলে।

১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাৎসি পার্টির নুরেনবার্গ কংগ্রেস যুদ্ধ প্রস্তুতির লক্ষ্যে জার্মানির অর্থনীতির পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য একটা চারসালা পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ১৯৩৬ সালের হেমন্তে হিটলারের এক গোপন সার্কুলারে নির্দেশ দেওয়া হয় যে চার বছর বাদে জার্মান সৈন্য বাহিনীকে সামরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য তৈরি থাকতে হবে, আর জার্মান অর্থনীতিকেও ওই সময়ের মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। এবং ফ্যাসিস্ট জার্মানির সামরিক শিল্প—যা মার্কিন ও ব্রিটিশ একচেটিয়াদের সহায়তায় পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল— দ্রুত গতিতে বিকাশ লাভ করতে শুরু করে।

জার্মান অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের (জার্মান ফেডারেটিভ প্রজাতন্ত্র) তথ্য অনুসারে, ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ সালের শেষ অবধি দেশে অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ১০ গুণ, আর বিমান নির্মাণ— প্রায় ২৩ গুণ।
ওই সময়ের মধ্যে জার্মানির মেশিন নির্মাণ কারখানাসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় প্রায় ৪ গুণ। অতি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক-স্ট্র্যাটেজিক সামগ্রীর উৎপাদনও এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।

(ক্রমশ)

Advertisement