• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কবিতা গুচ্ছ: অভিমান

ভিজবে কি আলো আলোয় ধরে আসা দিন যত। আপনার মাঝে আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার মাঝে আপনি

অভিমান
অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়

একরাশ অভিমান বুকে আঁকড়ে পড়ে থাকা
একা একা নীরবে নিভৃতে নিঃশব্দ সন্তরণ
ফল্গুধারার অদৃশ্য স্রোত জাগে।

Advertisement

অন্তরের ব্যথাভার আগলে রেখে
নির্নিমেষ চেয়ে থাকা আকাশপানে
দু’হাত বাড়াতেই—
হিমশীতল স্পর্শ ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে।

Advertisement

গুহামুখে সুখ ও শান্তির নিবিড় সহাবস্থান।

 

সহ্য-অসহ্য বিনিময়
নাসির ওয়াদেন
মৃত্যু আর সন্ধ্যার কাছে বিনিময় করো না কোনো কিছু দিয়ে
একটু ভালবাসা চাঁদ হয়ে বেঁচে থাক
সরল বিশ্বাস বাঁচার ছাদ হয়ে ঝরুক
কোনো কিছুর বিনিময়ে পায়ের মাটিটা দিও না সরিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে একদা সকাল আসবেই
মুহূর্তের স্তব্ধতা ঘিরে রাখছে যে বিস্ময়কে,
জাদুকাঠি আমাদের হাতে নেই, ছিলও না
অথচ আলাদিনের নামে বদনাম দিকে দিকে
ভালবাসার উষ্ণতা দিয়ে নিকট আত্মীয়তা
পরিমাপ করার দুঃখ যেন না থাকে
কার বিনিময়ে কিসের তুলনা করা হচ্ছে
সহ্য-অসহ্যের ডালে বিনিময়ের সুতো ঝুলছে

সব দিক এক
মৃণালেন্দু দাশ

প্রতিটি পদক্ষেপ, সংলাপ রতিগন্ধী প্রহেলিকা।
মন শরীরী হলেও, কুরে খায় অন্ধ অহমিকা।
গর্তের ভিতরে থাকা জলজ বঞ্চনা ততোধিক।
বুঝি না বুঝি, পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ দিক।
সব দিক এক— জন্মান্তর, জং ভরতি, সঠিকই।
সঞ্চালক কুশপুত্তলিকা, প্ররোচনা স্বভাবই।

 

বালি
শরদিন্দু লায়েক

যে বালিগুলি তুমি মুঠো ভরে তুলে
ছড়িয়ে দিলে উত্তরের হাওয়ায়—
তারা বহু যুগ ধরে জমে থাকা
নিশ্চল, নিরেট, শীতল পাথর।

বৃষ্টি ভেজা বিকেলের
আবেগী অভিমানে
যায় গলে, যায় ঝরে।

গলিত পাথর— বালির আকর,
হিমেল কাঁচের গুঁড়ো,
নিরুদ্দেশি যাযাবর।

যে বালি উড়ে উড়ে তোমার আঁচলে লাগে—
সে এক প্রবাহিত সমুদ্র,
ভেতরে অনেক খানি ঢেউ চেপে রাখে।

 

তোমার আলো, তোমার আঁধার
দেবজাত

তোমার আলো, তোমার আঁধার
সবটুকু কি আমায় বাঁধার?

নিশান্তিকা— রাত আকেলি…
ইচ্ছে হল, ছুঁয়েই ফেলি!

তোমার ভ্রান্তি, তোমার বিলাস
উলসানো শ্বাস, তত্ত্বতালাস—

আগুন হলে, আতসবাজি…
আমিও তখন, পুড়তে রাজি।

তোমার মায়া, তোমার খরিস
বৃষ্টি তোমার, তোমার বারিষ-

ধারায়, আমায় ধুইয়ে দিলে;
সেই মধুযাম অন্তমিলে…

বাজলো, দিবা, রাত্রিভাগে
শব্দকলার মিশ্র রাগে—

তোমার আঁধার, তোমার আলো
দেখলে কেমন সমান ছুঁলো!

‘তোমার আঁধার, তোমার আলো
দুইই আমার লাগলো ভালো’।

 

দু’টি কবিতা
শ্যামল শীল
ছবি প্রতিচ্ছবি
মাঝরাত, সব নির্জন, দেখি চারিদিকে সব চুপচাপ
ঢাল নেই, নেই তলোয়ার, নেই অস্ত্র, শুধু আছে খাপ
স্বপ্নেরা সব লুপ্ত, রাতের পোশাকে আকাশ সেজেছে, টিপটাপ
কত মেঘ এসে উড়ে গেল দূর দিগন্তে নেই পরিমাপ
দেখি আর ভাবি, ভাবতে ভাবতে কেটে যায় সারা দিনরাত
অন্ধকার ও আলোর মধ্যে চিরকাল চলে সংঘাত
দুঃখের ভার, কষ্টের দিন, সুখের তালাশে আপামর
ডুবে গেছে চাঁদ, ঢেউ থেমে গেছে, সাগরের হ’ল খুব জ্বর
জন্মদিন
এক একটি জন্মদিন কাটে আর
এক একটি ক্যালেন্ডার ক্রমে শেষ হয়ে যেতে থাকে
অভিযোগ শুনবার কোন লোক কাছাকাছি নেই
জানি না প্রতি দিন শূন্য না পূর্ণ হচ্ছি
এ অনেকটা অর্ধেক পূর্ণ না অর্ধেক খালি গ্লাসে
    ভরা জলের ব্যাপার-স্যাপার
কাঁধে হাত রাখবার বন্ধুরা দূরে চলে গেছে
রাস্তায় ঘুরি, সঙ্গে থাকে হিসাবের খাতা
হিসাবের গরমিল শোধরাতেই
বেশ কয়েকটি জন্মদিন কখন পার হয়ে যায়
আয়না দেখেই বুঝতে পারি একদিন

যৌবন
সঙ্গীতা মাইতি

সূর্য এখন কয়লার আঁচ, এ পরবাসে
ভিতরে জীবন আরো সুপক্ক লাল
রক্ত-মাংসে এঁকে দিয়েছে ভাঁটফুল,অশ্রু
ছায়াপুরুষ অতিসাধারণ ভোরে

পাহাড়ের গায়ে হাত দিই
দেখি অপেক্ষার গুলদস্তা,
স্নিগ্ধ ঈর্ষা মেখে শুয়ে পড়ছে আমারই ভিতরে
মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বালিহাঁস
ঠোঁটে হিমেল অক্ষরের বিড়বিড়,
এইবুঝি পুরানো হৃদয় জুটে গেল কন্যারাশিতে
চিনে নেবে কি সে তার গতজন্মের ঘর?

ও মাঝি বেড়া দাও,
বেড়া দাও তুফানে

উপরের দিকে মুখ তুলে কুমড়োলতা
যে কোনো বাহানায় লাল সূর্য দেখে ফেরতে পারে।

 

উন্মাদের চাঁদ
তাপসী লাহা

ভালোবাসার ভিতর কবিতাহীন হাঁটছি
কবিতার মায়ায়… সান্দ্র শরীরে

রুদ্ধ জল ঘিরে ধরে যেমন
মুখ নেই পৃথিবীর কোনো
সুখও

তারারন্ধ্র মেনে বৃষ্টি বোনা নিত্য শুদ্ধ পাঠে
মাঝি বৈঠা নামিয়ে ভাটিয়ালি গাইবে কি?

ভিজবে কি আলো
আলোয় ধরে আসা দিন যত।

আপনার মাঝে আমি দাঁড়িয়ে আছি
আমার মাঝে আপনি

দাঁড়ানোর মাঝের দরজা খুলে গেলে
মাঠভেজা দিনে আশশ্যাওড়ায়

খসে পড়ে ঈশ্বরের আলো
উন্মাদের চাঁদ।

Advertisement