• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া ২০২৬ সালে কোনও নির্বাচন নয়’

ফের হুঁশিয়ারি জামায়াত আমিরের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আগামী বছর বাংলাদেশে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজনৈতিক অঙ্গন। মঙ্গলবার ঢাকায় এক ইসলামি জোটের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া ২০২৬ সালের নির্বাচন হবে না, হতেও দেওয়া হবে না।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে নারাজ, তাদের জন্য ছাব্বিশে কোনও নির্বাচন নেই। আগে গণভোটে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। তারপরই নির্বাচন হতে পারে।’ তাঁর এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

আইনবিদদের মতে, বর্তমান সংবিধানে জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বা গণভোট আয়োজনের কোনও বিধানই নেই। ফলে, জামায়াতের এই অবস্থান সংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে বিরোধ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবু এই দাবিকে সামনে রেখে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে।

Advertisement

এ দিকে বিএনপি স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বলেছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত ভোটের দিন-তারিখ ঘোষণা করা। তাদের বক্তব্য, ‘ভোট বিলম্বিত করা মানে জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’

প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, তারা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জামায়াত ও এনসিপি উভয় দলই জুলাই সনদকে আগে গণভোটে পাশ করানোর পক্ষে।

সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকার ২-৩ দিনের মধ্যেই পদক্ষেপ নেবে।’ তাঁর কথায়, ‘রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পূর্ণ সমঝোতা হয়নি। কিন্তু দেশের স্বার্থে আমরা সকলের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছি।’ সরকারি সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গেই আয়োজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।

এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগও আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতা-বিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায়ের দিন ঘোষণার কথা। ওই মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (রাজসাক্ষী)। জুলাই হত্যাযজ্ঞ-সম্পর্কিত এটিই প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণার দিন জানানো হবে সে দিনই।

এই মামলাকে ঘিরে আওয়ামি লিগ নতুন করে সাংগঠনিক উত্থানের চেষ্টা শুরু করেছে। গত চার-পাঁচদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় দলের কর্মীরা বিক্ষোভ ও ঝটিকা মিছিল করছে। ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকায় লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে হাসিনার দল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলি জানিয়েছেন, গত দু’দিনে ঢাকায় অন্তত ১০-১১টি বাসে আগুন ও ২০-২২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক। আওয়ামি লিগের পক্ষ থেকেও কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মনে হয় না।’

বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশ তাই ফের ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। জুলাই সনদ, গণভোট ও ফেব্রুয়ারির ভোট— এই ত্রিমুখী জটিলতার মধ্যেই দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ আপাতত ঝুলে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তার দোলাচলে।

Advertisement