দুরন্ত ছন্দে বাংলার দ্রুতগামী বোলার মহম্মদ শামি। মহম্মদ শামি ভারতীয় দলে জায়গা না পাওয়ার পরে তাঁর মনে আরও জেদ বেড়ে যায়। তাই হয়তো নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মঙ্গলবার ইডেনে গুজরাতের বিরুদ্ধে যেভাবে মহম্মদ শামি ঝলসে উঠলেন, তার কোনও আলাদা করে প্রশংসা করার প্রয়োজন হয় না। গুজরাত মুখ থুবড়ে পড়ল শামির অসাধারণ বোলিংয়ের কাছে। একা শামি দুই ইনিংসে আটটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলার জয়কে সহজ করে দেন। রঞ্জি ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচে আবার সরাসরি জয়ের সুবাদে বাংলা ৬ পয়েন্ট তুলে নিল। প্রথম ম্যাচে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলা সরাসরি জয় তুলে নেয়। যার ফলে দুই ম্যাচে বাংলার ঘরে জমা পড়ল ১২ পয়েন্ট।
স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্মীরতন শুক্লার দল যেভাবে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে, তাতেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, বাংলা রঞ্জি ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ রাখবে। বাংলা ১৪১ রানে জয় পেয়েছে গুজরাতের বিরুদ্ধে। গুজরাতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে শামি পাঁচটি উইকেট তুলে নেন। আর প্রথম ইনিংসে গুজরাতের তিনজন খেলোয়াড়কে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছিলেন শামি।
Advertisement
আসলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দলে না নেওয়ার পরে ভারতের প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর বলেছেন, শামির ফিটনেস নিয়ে সেইভাবে কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই। এই কথা শুনে শামি নিজেই বলেছেন, ফিটনেসের রিপোর্ট আমি নিজে কেন দিতে যাব? নির্বাচকরাই তো বিচার করবেন কোন খেলোয়াড় ফিট রয়েছেন। তাই রঞ্জি ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ থেকে শামির বল ঝলসে উঠেছিল।
Advertisement
উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে সাতটি এবং গুজরাতের বিরুদ্ধে আটটি উইকেট ভেঙে দেওয়ার পরে শামির ব্যাপারে নির্বাচকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা নিয়ে। শামিকে অবহেলা করার জন্য তিনি আরও বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আর শামি নিজে সেই কাজটি করে ফেললেন। প্রথম থেকেই জানা ছিল, খেলার চতুর্থ দিনে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বাংলা কোনওভাবেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। তৃতীয় দিনের শেষে বাংলার রানসংখ্যা ছিল ৬ উইকেটে ১৭০। সেই কারণে চতুর্থদিনে ঝোড়ো ইনিংস খেলার চেষ্টায় অনুষ্টুপ মজুমদার শক্ত হাতে ব্যাট করতে থাকেন। বাংলা ৪৪ রান করে আট উইকেটে ২১৪ রান করে ডিক্লেয়ার ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ। অনুষ্টুপের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৮ রান আর আকাশদীপ ১৮ বলে ২৫ রান করেন।
গুজরাতকে জিততে হলে ৩০৭ রান করতে হবে, এই অবস্থায় গুজরাতের যা ব্যাটিং আক্রমণ তাতে একদিনের কম সময়ে তাঁদের পক্ষে ওই রান করা সম্ভব ছিল না। পাশাপাশি বাংলার বোলারদেরও লক্ষ্য ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুজরাত শিবিরে ধস নামিয়ে দেওয়া। বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে খুশি হতে চাননি। তাঁর দরকার ৬ পয়েন্ট। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের উপর নির্ভর করে বাংলা ৪৫.৫ ওভারে গুজরাতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে যায়। তবে গুজরাতের উইকেটরক্ষক উর্বিল প্যাটেল ১০৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। জয়মিত প্যাটেল ৪৫ রান করে তাঁদের স্কোরবোর্ডকে কিছুটা ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যান। আর অবশিষ্ট আটজন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে দুই অঙ্কের রানও আসেনি। ৬ জন খেলোয়াড় শূন্য রানে আউট হয়ে যান। ১৮৫ রানে গুজরাতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে যায়। গুজরাতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে শাহবাজ আহমেদ ছ’টি উইকেট নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর হাতে তিনজন শিকার হন। আকাশদীপ পেয়েছেন একটি উইকেট। দুই ইনিংসে শাহবাজ ন’টি উইকেট ছিনিয়ে নেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গুজরাতের ২০টি উইকেটের মধ্যে বোলারদের দখলে ছিল ১৯টি উইকেট। আর একজন রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। বাংলার সাহসী ভূমিকাকে প্রশংসা করে কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা বলেন, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে রঞ্জি ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে বাংলা বড় পদক্ষেপ রাখতে পারবে।
Advertisement



