মণ্ডপে প্রবেশ করলেই মনে হবে সোনায় মোড়া জগতের এক আশ্চর্য সৃষ্টিতে এসে পড়েছেন। যেখানে দন্ডায়মান সুউচ্চ মা দুর্গা এবং তাঁর সন্তানরা। সুবিশাল সোনালি মণ্ডপ জুড়ে কেবল পাতার কাজ, ঝাড়বাতি, স্বস্তিক চিহ্ন এবং চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। কালীঘাট মিলন সংঘের এবারের আকর্ষণ ‘উত্তরণ’ অর্থাৎ উন্নয়নের পথে আরও এক ধাপ। প্রতিবারের মত এবারও প্রথমায় নিজের পাড়ার কালীঘাট মিলন সংঘের দুর্গাপুজোর শুভ উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী কলকাতার দুর্গাপুজোর মধ্যে কালীঘাট মিলন সংঘ অন্যতম। প্রতিবারই তাঁদের থিম টক্কর দেয় কলকাতার বড় বড় পুজোগুলিকে।
সোমবার সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করে মণ্ডপ সজ্জার ভুয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘৮২তম বর্ষে পদার্পন করল এই পুজো। মণ্ডপ জুড়ে শুধুই পাতার কাজ। বট, অশত্থ-সহ প্রভৃতি পাতার কাজ অত্যন্ত নিখুঁত। জায়গার অভাব থাকা সত্ত্বেও যেভাবে সাজানো হয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সবমিলিয়ে খুব সুন্দর হয়েছে। আমি কিছু আইডিয়া দিয়েছি।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তা জড়ানো প্রশ্ন, ‘বর্ষায় সমস্যা হবে না তো? বৃষ্টিতে ভিজলে কি হবে?’ পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে একজন জানান, ‘বৃষ্টিতে ভেজার সম্ভাবনা নেই।’ তাতেই স্বস্তি পান ‘ঘরের মেয়ে’ মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট পুজো ক্লাবের সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায়, সম্পাদক কার্তিক বন্দোপাধ্যায়, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্ণধার দেবব্রত বিশ্বাস, ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মহারাজ, পৌরমাতা কাজরী বন্দোপাধ্যায়-সহ প্রমুখ।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, তাঁকে দামী উপহার না দিয়ে কেবল একটি ধানের ছড়া দিলেই তিনি বেশি খুশি হন। সেই মত কালীঘাট মিলন সংঘের তরফ থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয় একটি ধানের ছড়া। উপহার গ্রহণ করে ‘পাড়ার মেয়ে’ মমতা জানান, তাঁর ধানের ছড়াটিও মা দুর্গার কাছেই থাকবে। তাঁর ভাষায়, ‘বাংলা ধন ধান্য পুষ্পে ভরা। আমার বাড়িতেও ধানের ছড়া আছে। নবান্ন মানেও কিন্তু নতুন ধান। আমি ধান এবং যাঁরা ধান ফলায় তাঁদের শ্রদ্ধা করি। আমার এই ধানের ছড়াটি এখানেই থাকবে।’ এরপরই মণ্ডপের কোনায় কোনায় চোখ বুলিয়ে উদ্যোক্তাদের একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন মমতা। কোন জিনিসটি কিভাবে বানানো হল, সজ্জায় সামান্য পরিবর্তন আনা যায় কিনা – সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দিলীপ মহারাজের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে প্রতিবারের মত এবারও কালীঘাট মিলন সংঘ গোটা কালীঘাটের শোভা বৃদ্ধি করবে।