বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পরিচালনা ও চিত্রগ্রহণের পুরস্কার পেয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এই পুরস্কার আসলে মিথ্যা প্রচারের স্বীকৃতি। এই সিদ্ধান্তকে তিনি কেরালার প্রতি চূড়ান্ত অপমান হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই মিথ্যা প্রচারমূলক ছবিটি তৈরি করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, কেরালার ভাবমূর্তি নষ্ট করা। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিচারকমন্ডলী এরকম একটি ছবিকে পুরস্কৃত করে আসলে বিভাজনের রাজনীতিকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ছবিটি কেরালা সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বীজ বুনতে চেয়েছে। এটা শুধু কেরালা রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রতিই অপমান নয়, দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকেই অপমান করা হয়েছে।’ তিনি স্পষ্ট জানান, এই ধরনের ছবিকে হাতিয়ার করে সঙ্ঘ পরিবার ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
২০২৩ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি। এই ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেন, চিত্র গ্রাহক প্রশান্তনু মহাপাত্র। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কেরালার চারজন তরুণী ধর্মান্তরিত হয়ে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএসআইএস-এ যোগ দেয়। তারপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়ায়। আসলে এখানে খুব স্পষ্টভাবেই ‘লাভ জিহাদ’ ইস্যুকেই ছবিটির বিষয় করা হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ
ভাগ্যচক্রে ধর্মান্তরিত হয়ে তাঁর নাম হয় ফতিমা। আসলে পরিকল্পনা করে ফাঁদ পেতে শালিনীকে ফতিমা করে তোলার কাহিনী দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন। পরিচালকের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, হাজার হাজার মহিলা এইভাবে প্রতারিত হয়েছেন। পরে অবশ্য তাঁরা সেই দাবিকে কিছুটা ভিত্তিহীন বলে স্বীকার করে নেন। তাঁদের দাবি, এই ধরনের কয়েকটি ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর কাহিনী ‘কাল্পনিক’। তবে এইসব বিতর্কের মধ্যেও বক্স অফিসে ছবিটি বিপুল সাফল্য পেয়েছিল। প্রায় ২০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি ছবিটি আয় করেছিল প্রায় তিনশো চার কোটি টাকা।
Advertisement
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সমাজমাধ্যমে আরও লিখেছেন, ‘কেরালার মাটিতে বরাবরই সাম্প্রদায়িক অশান্তি রুখে দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে রয়েছে যথেষ্ট শিক্ষার আলো। ”দ্য কেরালা স্টোরি” ছবিতে কেরালার তরুণ সমাজকে সম্পূর্ণ ভ্রান্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আসলে রাজ্যের ধর্মীয় পরিবেশ নষ্ট করার প্রচেষ্টা এই ছবি।’ পিনারাই বিজয়নের এই কথার সুরেই কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেছেন, ‘জাতীয় পুরস্কার নয়, এই সিনেমাটিকে আবর্জনার স্তুপে ফেলে দেওয়া উচিত। ”ঈশ্বরের আপন দেশ” অর্থাৎ কেরালাকে বদনাম করার জন্য এভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’
Advertisement
এই বিতর্কের মধ্যেই জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আশুতোষ গোয়ারিকর জানিয়েছেন, ‘এই ছবির সিনেম্যাটোগ্রাগ্রাফির কাজ খুবই বাস্তবসম্মত এবং অসাধারণ। ক্যামেরার কাজ কখনও গল্পকে ছাপিয়ে যায়নি। আর একটি কঠিন বিষয়কে সিনেমায় গল্পের ছলে যেভাবে ফোটানো হয়েছে, তা প্রশংসনীয়।’ তবে আশুতোষ যা-ই বলুন, চলচ্চিত্র মহলে অনেকেরই মত, এই ধরনের ছবি করার যে প্রবণতা, তা বিজেপি-আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথকে প্রশস্ত করে তোলা। আর তাই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর এই নিয়ে তুমুল বিতর্কও হয়েছিল।
Advertisement



