কেরল রাজ্যের মুকুটে জুড়ল নয়া পালক। দেশের মধ্যে প্রথম ‘চরম দারিদ্রসীমা থেকে মুক্ত’ রাজ্যের শিরোপা পেল কেরল। শনিবার কেরল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে এই কথা ঘোষণা করেন বামশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি বলেন, ‘আজকের কেরল কিরাভি ইতিহাসে একটি স্থান অধিকার করল। আমরা কেরলকে চরম দারিদ্র্যমুক্ত প্রথম ভারতীয় রাজ্যে পরিণত করতে সফল হয়েছি। এই বিধানসভা অনেক ঐতিহাসিক আইন এবং নীতি ঘোষণার সাক্ষী থেকেছে। এখন আরও একটি মাইলফলক ছুঁল নব কেরল।‘
এদিন ছিল কেরলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস তথা ‘কিরাভি’। আজকেই ভারতের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে ইতিহাস গড়ল কেরল। তবে ভারতের মধ্যে ইতিহাস তৈরি করলেও বিশ্বে কেরলের স্থান দ্বিতীয়। ২০২০ সালে চিন সেখানকার প্রতিটি প্রদেশকেই চরম দ্রারিদ্র মুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল।
Advertisement
কী কী পদক্ষেপ এবং কীভাবে এই নজির গড়া সম্ভব হল তাও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। কেরল যে সম্পূর্ণ ভাবে চরম দারিদ্রসীমার বাইরে বেরোতে চলেছে তা আগেই জানানো হয়েছিল। নভেম্বর মাসে সরকারি ভাবে তা ঘোষণার হওয়ার কথা ছিল। শনিবার, ১ নভেম্বর রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন।
Advertisement
২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণের পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে কেরলকে চরম দারিদ্রসীমা মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজয়ন সরকার। ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রজেক্ট’ -এর মাধ্যমে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়। রাজ্যের ২০,৬৪৮টি পরিবারের দৈনন্দিন খাবার, চিকিৎসা, ওষুধপত্র নিশ্চিত করা হয়েছে। ৮৫ হাজারের বেশি মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
বিজয়ন জানিয়েছেন সাড়ে পাঁচ হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার বাড়ি মেরামত করা হয়েছে। কিছু বাড়ির নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। প্রায় ২৭০০ গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজয়ন বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনের সময় জনতাকে দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে একটি।‘
কেরলের ২১ হাজার ২৬৩ জন নাগরিককে রেশন কার্ড এবং আধার কার্ড দেওয়া হয়েছে। পেনশনও চলছে। রাজ্য জুড়ে ৬৪ হাজারের বেশি সংবেদনশীল পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের উন্নতির জন্য আলাদা ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
উল্লেখ্য , ভারতের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে একশো শতাংশ স্বাক্ষরতার স্বীকৃতি পেয়েছিল কেরল। পাশাপাশি প্রথম ডিজিটাল শিক্ষিত রাজ্য এবং সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়িত রাজ্যের শিরোপাও রয়েছে কেরলের ঝুলিতে। এবার নতুন পালক জুড়ল তাদের মুকুটে। আর এর পিছনে রয়েছে তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা।
এদিকে বিজয়নের এই দাবিকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়ো’ বলে দাবি করেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট। ঘোষণার পরই এর বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করে তারা। শুক্রবার কেরলের স্বনির্ভর মন্ত্রী এমবি রাজেশ জানান, রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে দূরে সরিয়ে রেখে শাসক এবং বিরোধীদের সমন্বয়ে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। যে সব জায়গায় বিরোধীরা ক্ষমতায়, সেখানেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে কাজ হয়েছে। তবে সরকারি প্রকল্পের বিরোধিতা করার জন্য কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটকে কটাক্ষ করেন রাজেশ।
Advertisement



