১৮ দিনের মহাকাশ অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরছেন শুভাংশু শুক্লারা। সোমবার মহাকাশ স্টেশন থেকে রওনা হয়েছেন তিনি এবং তাঁর তিন সতীর্থ। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৫০ মিনিটে স্পেসএক্সের ড্রাগন স্পেসক্রাফট আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন তিনি। এই মহাকাশ অভিযানের উদ্যোক্তা সংস্থা নাসার তরফে জানানো হয়েছে, এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হলেও কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হয়নি। ফলে ২২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের দীর্ঘ যাত্রা শেষে আগামী ১৫ জুলাই মঙ্গলবার, ভারতীয় সময় বিকেল ৩ টে নাগাদ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে তাঁরা অবতরণ করবেন।
জানা গিয়েছে, শুভাংশু এবং তাঁর সঙ্গী তিন মহাকাশচারীকে আগেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় তিনি ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার সেই উক্তিই পুনরায় উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ভারত আজও ‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’।
Advertisement
নাসা জানিয়েছে, আইএসএস থেকে আলাদা হওয়ার পরেই শুভাংশুদের ক্যাপসুল পৃথিবীর দিকে এগোতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শুভাংশুদের ক্যাপসুল তীব্র তাপ এবং ঘর্ষণের সম্মুখীন হবে। এই সময়ে ক্যাপসুলের গতি থাকে ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ধীরে ধীরে যা কমে আসবে ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। তার প্রক্রিয়া হিসেবে মহাকাশযানটি যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করে ‘রেট্রোগ্রেড বার্ন’ নিক্ষেপ করা হবে। অর্থাৎ এই সময়ে ক্যাপসুলের গতিবেগ কমানোর জন্য এক বার রকেট নিক্ষেপ করা হবে।
Advertisement
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর শুভাংশুদের ক্যাপসুল থেকে দু’টি প্যারাশুট খুলবে। প্রথমটি ছোট। তার ফলে ক্যাপসুলের গতি সামান্য কমবে। তার পর নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছনোর পরে মূল প্যারাশুটটি খুলে যাবে। নাসা জানিয়েছে, যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে, ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে খুব ধীরে ধীরে নামবে শুভাংশুদের ক্যাপসুল। এরপর স্পেসএক্সের একটি দল সমুদ্রে অবতরণের পর দ্রুত পৌঁছে যাবে শুভাংশুদের ক্যাপসুলের কাছে। ক্যাপসুলটিকে তারা জাহাজে তুলে নেবে। তার পর সেখানেই একে একে বেরিয়ে আসবেন মহাকাশচারীরা।
প্রসঙ্গত, একাধিকবার মহাকাশ অভিযানের দিনক্ষণ নির্ধারিত হলেও যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অন্যান্য কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে গত ২৫ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন শুভাংশু এবং তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন তিন মিশনসঙ্গী– অ্যাক্সিয়ম-৪-এর ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজনিউস্কি এবং টিবর কাপু। যে ‘ড্র্যাগন’ মহাকাশযানে চড়ে শুভাংশুরা মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন, তাতে চড়েই পৃথিবীতে ফিরে আসছেন। সোমবার বিকেলে শুরু হয়েছে ‘আনডকিং’। শুভাংশুদের নিয়ে মহাকাশযানটি মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদাও হয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই ‘আনডকিং’ বলা হয়। পুরো এই প্রক্রিয়াটি স্বংয়ক্রিয়। তবে মহাকাশ যানের ভিতর থেকে মহাকাশচারীরা সমগ্র প্রক্রিয়াটির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
Advertisement
