• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

১৮ দিনের মহাকাশ অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরলেন শুভাংশু ও তাঁর তিন সঙ্গী

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর শুভাংশুদের ক্যাপসুল থেকে দু’টি প্যারাশুট খোলে। প্রথমটি ছোট। তার ফলে ক্যাপসুলের গতি সামান্য কমে।

১৮ দিনের মহাকাশ অভিযান সেরে ঘরে ফিরলেন শুভাংশুরা। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় বিকেল ৩টে ১ মিনিটে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় জলভাগে শুভাংশু এবং তাঁর তিন মিশন সঙ্গীর ক্যাপসুল মন্থর গতিতে আছড়ে পড়ে। শুভাংশুর সঙ্গে অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানের অন্য তিন সদস্যও­- পেগি হুইটসন, স্লাওস উজনানস্কি ও টিবর কাপুও পৃথিবীতে ফিরেছেন। এই সফল অবতরণের পর আনন্দে ফেটে পড়েছে গোটা দেশ। এই ইতিহাস সৃষ্টির ফলে আনন্দিত মহাকাশ বিজ্ঞানীরাও।

এদিকে এই অবতরণের সময় লখনউতে জায়ান্ট স্ক্রিনে নজর রাখছিলেন মহাকাশচারী শুভাংশুর বাবা ও মা। স্পেসএক্সের ক্যাপসুল সফলভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণের পর তাঁরা কেক কেটে ছেলের এই মহাকাশ জয়ের সাফল্য উদযাপন করেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত সোমবার মহাকাশ স্টেশন থেকে রওনা হন শুভাংশু এবং তাঁর তিন সতীর্থ। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৫০ মিনিটে স্পেসএক্সের ড্রাগন স্পেসক্রাফট আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হন তাঁরা। এই মহাকাশ অভিযানের উদ্যোক্তা সংস্থা নাসার তরফে জানানো হয়েছে, এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হলেও কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হয়নি। ফলে ২২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের দীর্ঘ যাত্রা শেষে ১৫ জুলাই মঙ্গলবার, ভারতীয় সময় বিকেল ৩ টে নাগাদ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে তাঁরা অবতরণ করেন।

Advertisement

জানা গিয়েছে, শুভাংশু এবং তাঁর সঙ্গী তিন মহাকাশচারীকে আগেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় তিনি ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার সেই উক্তিই পুনরায় উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ভারত আজও ‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’।

আইএসএস থেকে আলাদা হওয়ার পরেই শুভাংশুদের ক্যাপসুল পৃথিবীর দিকে এগোতে শুরু করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শুভাংশুদের ক্যাপসুল তীব্র তাপ এবং ঘর্ষণের সম্মুখীন হয়। এই সময়ে ক্যাপসুলের গতি থাকে ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ধীরে ধীরে যা কমে আসে ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। তার প্রক্রিয়া হিসেবে মহাকাশযানটি যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করে ‘রেট্রোগ্রেড বার্ন’ নিক্ষেপ করা হবে। অর্থাৎ এই সময়ে ক্যাপসুলের গতিবেগ কমানোর জন্য এক বার রকেট নিক্ষেপ করা হয়।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর শুভাংশুদের ক্যাপসুল থেকে দু’টি প্যারাশুট খোলে। প্রথমটি ছোট। তার ফলে ক্যাপসুলের গতি সামান্য কমে। তার পর নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছনোর পরে মূল প্যারাশুটটি খুলে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে খুব ধীরে ধীরে নেমে আসে শুভাংশুদের ক্যাপসুল। এরপর স্পেসএক্সের একটি উদ্ধারকারী দল সমুদ্রে অবতরণের পর দ্রুত পৌঁছে যায় শুভাংশুদের ক্যাপসুলের কাছে। ক্যাপসুলটিকে তারা জাহাজে তুলে নেন। তার পর সেখানেই একে একে বেরিয়ে আসেন শুভাংশু সহ অন্য তিন মহাকাশচারী।

প্রসঙ্গত, একাধিকবার মহাকাশ অভিযানের দিনক্ষণ নির্ধারিত হলেও যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অন্যান্য কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে গত ২৫ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন শুভাংশু। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন তিন মিশনসঙ্গী অ্যাক্সিয়ম-৪-এর ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজনিউস্কি এবং টিবর কাপু। যে ‘ড্র্যাগন’ মহাকাশযানে চড়ে শুভাংশুরা মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন, তাতে চড়েই পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। সোমবার বিকেলে শুরু হয় ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়া। শুভাংশুদের নিয়ে মহাকাশযানটি মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদাও হয়ে যায়। মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই ‘আনডকিং’ বলা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বংয়ক্রিয়। তবে মহাকাশ যানের ভিতর থেকে মহাকাশচারীরা সমগ্র প্রক্রিয়াটির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

Advertisement