বাংলাকে ব্রাত্য করে অসমের রাজ্য ভাষা হবে অসমিয়াই ফের জাতিবিদ্বেষের আগুন জ্বাললেন অমিত শাহ

পুরনাে বিতর্ক ফিরছে অসমে। রাজ্যভাষা হিসেবে অসমিয়াকেই স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Written by SNS New Delhi | December 2, 2019 4:15 pm

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। (File Photo: IANS)

পুরনাে বিতর্ক ফিরছে অসমে। রাজ্যভাষা হিসেবে অসমিয়াকেই স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার জন্য সংবিধান সংশােধনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। উত্তরপূর্ব ভারতের রাজনৈতিক দল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এনআরসি নিয়ে বিস্তর আলােচনা হয়েছে।

তবে অসমের রাজ্যভাষা হিসাবে অসমিয়াকে স্বীকৃতি দিলে ফের দানা বাঁধতে পারে ভাষা আন্দোলন। সােশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন- এরকম অনৈতিকভাবে সংবিধান পাল্টে বাংলা ভাষার সঙ্গে ছিনিমিনি খেললে বরাক উপত্যকা অসম থেকে পৃথক হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, অসম রাজ্যের কাছাড় জেলার শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিতে হাজার হাজার বাঙালি থাকতেন। সে সময় অসমিয়ারা মনে করেছিলেন, বিপুল সংখ্যক বাঙালির বাস তাঁদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। আর বাঙালিদের জন্য যখন আলাদা একটি রাজ্য রয়েছে, তখন আর অসমে থাকা কেন? জাতিবিদ্বেষী এই মনােভাব ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকে। অসমে বাঙালিদের বহিষ্কারের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। দুই ভাষাগােষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের কটি সিদ্ধান্ত আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। ১৯৬০-সালের এপ্রিলে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, অসমের রাজ্যভাযা হবে অসমিয়াহ। অসমিয়াই হবে রাজ্যে একমাত্র সরকারি ভাষা। অর্থাৎ বাঙালিদেরও অসমিয়াতেই কাজ সারতে হবে। 

সে বছর জাতিবিদ্বেষের জিগির এতটাই বাড়তে থাকে যে হাজার হাজার বাঙালি মানুষ অসম ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসেন। অনেকের প্রাণ যায়। যখন পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ, তখন অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিমলপ্ৰসাদ চালিহার একটি সিদ্ধান্তে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাঙালি ঘুরে দাঁড়ায়। প্রদেশ কংগ্রেসে সিদ্ধান্তকে প্রশাসনিক রূপ দিয়ে চালিহা ঘােষণা করেন, অসমিয়াই হবে রাজ্যের সরকারি কাজকর্মের ভাষা।

উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। অসম সরকার অনড়। বাঙালিরাও দাবি থেকে সরবে না। সরকারের দাবি খারিজ করে। ধর্মঘট করার প্রস্তুতি নেয়। শিলচরের রাস্তায় নামে পুলিশ। ১৯ মে সকাল থেকে শুরু হয় মিছিল, বিক্ষোভ। দিকে দিকে চলতে থাকে পিকেটিং। ১৪৪ ধারা অমান্য করায় অনেক ধর্মঘটীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিলচর রেল স্টেশন অবরােধ করে উত্তেজিত জনতা। অবরোধ তুলতে গুলি চালায় আসাম রাইফেলস। সেই গুলিতে মারা যান ১১-জন ভাষা শহিদ।

এই আত্মবলিদান অসমে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছিল। যদিও বছর দুয়েক আগেও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ও রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ছুটি বাতিল করেছিল অসমের বিজেপি সরকার। যা নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।