• facebook
  • twitter
Wednesday, 10 December, 2025

সমাজমাধ্যমের গেরোয় পিছোল ভারতীয়দের ভিসার তারিখ

আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাতিল হওয়া ভিসার মধ্যে আট হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।

প্রতীকী চিত্র

এইচ-১বি ভিসা যাচাই করণ প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে চলেছে আমেরিকা। আবেদনকারীর সমাজমাধ্যম যাচাইয়ের বিষয়টিতে জোর দিতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর জেরে পিছিয়ে গেলে ভিসার ইন্টারভিউর তারিখ। ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জনিয়েছে, ডিসেম্বরে যাঁদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল, তাঁদের ইন্টারভিউয়ের তারিখ আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচমকা এই দিনক্ষণ বদলের জেরে বিপাকে পড়েছেন বহু ভারতীয়।

মঙ্গলবার রাতে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ভিসা আবেদনকারীদের জন্য এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভিসা আবেদনকারীরা যদি ইমেল পান, তাহলে আপনাদের ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পুনরায় ঠিক হয়েছে। মিশন ইন্ডিয়া আপনার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ জানাবে। ‘সেই সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের তরফে সতর্ক করা হয়েছে, ইমেল পাওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি কনস্যুলেটে আসেন, তবে তাঁকে অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

Advertisement

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে যাঁদের সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল তাঁদের অনেকের অ্যাপায়েন্টমেন্ট ২০২৬-এর মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজনের সাক্ষাৎকার পেছানো হয়েছে তা জানা যায়নি।

Advertisement

এইচ-১বি হল একটি অ-অভিবাসী ভিসা। যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা সাময়িক ভাবে আমেরিকায় থেকে সেখানকার সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। এই ভিসা নিয়ে প্রতি বছর ভারত থেকে বহু মানুষ আমেরিকায় যান। ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করে। সেই সূত্র ধরেই আমেরিকার সমস্ত দূতাবাসে এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছে সে দেশের বিদেশ দপ্তর।

মার্কিন বিদেশ দপ্তর জানিয়েছে, আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য তাঁদের সমাজমাধ্যমে ‘পাবলিক’ করে রাখতে হবে। সমাজমাধ্যমে তাঁদের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেই ভিসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাম্প প্রশাসন। পড়ুয়াদের ভিসার ক্ষেত্রেও একই ধরনের যাচাইপ্রক্রিয়া থাকবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ভিসা দেওয়ার সময় খতিয়ে দেখা হবে আবেদনকারী আমেরিকা এবং সে দেশের নাগরিকদের কোনও ক্ষতি করতে পারেন কি না। তেমন সম্ভাবনা থাকলে ভিসার আবেদন খারিজ করা হবে।

এই পোস্টের জেরেই আমেরিকায় পড়তে চাওয়া ও চাকরি সূত্রে সেখানে যেতে চাওয়া ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ১৫ ডিসেম্বর থেকে আবেদনকারীদের অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলি যাচাই করা শুরু হবে বলে খবর। সেই কারণে ইন্টারভিউর তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হলে বলে মনে করা হচ্ছে। মিলবে ভিসা ইন্টারভিউয়ের সুযোগ সেই নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় আবেদনকারীরা। এর ফলে অনেককেই চাকরি বা বিদেশে পড়ার সুযোগ হারাতে হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১বি ভিসার উপর এককালীন ১ লক্ষ ডলারের অতিরিক্ত ফি চাপায়।যার প্রভাব ভারতীয় আবেদনকারীদের উপর সরাসরি পড়ে। কিছু দিন আগে আফগান নাগরিকের গুলির ঘটনার পর ট্রাম্প সরকার গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব ও অন্যান্য ভিসা প্রক্রিয়া ১৯টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ দেশ’-এর নাগরিকদের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করে। আমেরিকার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জানিয়েছেন, ৩০ থেকে ৩২ দেশের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে। আমেরিকায় বৈধ ভিসাধারীরাও রয়েছে প্রশাসনের আতশকাচের নীচে। প্রায় পাঁচ কোটি ৫০ লক্ষ বিদেশি নাগরিকের উপর নজর রাখা হয়েছে। চলছে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াও।

জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে প্রায় ৮৫ হাজার ভিসা বাতিল করেছে আমেরিকা। এর কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিকে। একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থে ভিসার অনুমোদনের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে ৮৫ হাজার ভিসা বাতিলের কথা জানিয়েছে মার্কিন বিদেশ দপ্তর। সেই সঙ্গে একটি বার্তাও দিয়েছে তারা। ওই পোস্টের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি ছবিও দেওয়া হয়। তাতে লেখা, ‘আমেরিকাকে আবার নিরাপদ করে তুলুন।’

আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাতিল হওয়া ভিসার মধ্যে আট হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ। ভিসা বাতিলের কারণ জানতে চাওয়া হলে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিসা বাতিল করা হয়েছে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে। চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার জন্যও অনেকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন প্রশাসন। শুধু তাই নয়, কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাজা নিয়ে বিক্ষোভের জেরেও বহু বিদেশি পড়ুয়াকে তাঁদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইহুদি বিদ্বেষ বা চরমপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থনের অভিযোগেও অনেক বিদেশি পড়ুয়ার ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।

Advertisement