ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন আরও তীব্র হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। সোমবার হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়ার অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে এবং সেই ধাক্কার পেছনে রয়েছে আমেরিকার চাপানো ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক। যদিও তিনি সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করেননি, তবে তাঁর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা হিসেবে ভারতের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং আমেরিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করলে তার উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘এটি রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে রাশিয়ার উপর চাপ বাড়ানো, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবস্থান স্পষ্ট করার কৌশল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা।
Advertisement
গত কয়েক মাস ধরেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে চলেছেন ট্রাম্প। প্রথমে ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি ভারতীয় পণ্যের উপর। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে আমেরিকা ভারতের সঙ্গে আর কোনও বাণিজ্য আলোচনা করবে না।’
Advertisement
নয়াদিল্লি এই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, দেশের স্বার্থে কোনও আপস হবে না। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানান, ‘ভারত আজ আত্মনির্ভর এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র – কোনও বিদেশি চাপকে গুরুত্ব দেবে না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অভিযোগ করেছে, আমেরিকা নিজেই রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম, সার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করছে, অথচ একই কাজের জন্য ভারতকে শাস্তি দিচ্ছে।’
এদিকে, তেল আমদানি নিয়ে ভারতের অবস্থানেও কোনও বদল আসেনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগস্টের শুরুতেও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এমনকি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সম্প্রতি মস্কো গিয়ে রুশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন, যা পরিস্থিতির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক ঘিরে বাড়ছে কূটনৈতিক উত্তেজনা। ট্রাম্পের দাবি, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে একের পর এক আন্তর্জাতিক সংঘাত থামিয়েছেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থামাতেও তিনি মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তবে অনেকের মতে, ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসলে রাশিয়ার উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট, ভারত তার স্বাধীন বিদেশনীতি থেকে একচুলও সরে আসবে না। ট্রাম্পের শুল্ক চাপানো এবং হুমকি সত্ত্বেও নয়াদিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছে।
Advertisement



