• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

বেলজিয়াম থেকে গ্রেপ্তার ১৩,৫০০ কোটির প্রতারণায় অভিযুক্ত মেহুল

১৩,৫০০ কোটির প্রতারণায় অভিযুক্ত মেহুল চোকসি গ্রেপ্তার। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ীকে বেলজিয়াম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৩,৫০০ কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত মেহুল চোকসি গ্রেপ্তার। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ীকে বেলজিয়াম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৬৫ বছরের পলাতক এই ব্যবসায়ী আপাতত রয়েছেন বেলজিয়ামের জেলে। তাঁর গ্রেপ্তারির জন্য বেলজিয়াম সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ২০১৮ এবং ২০২১ সালের মুম্বই আদালতের দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে বেলজিয়ামের পুলিশ।

প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত এরপর মেহুলকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি পেশ করবে বেলজিয়ামের আদালতের কাছে। সূত্রের খবর, খুব তাড়াতাড়ি জামিনের আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন মেহুল। ৬৫ বছর বয়সি মেহুলের একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তার ভিত্তিতেই জামিন চাইতে পারেন তিনি। এর আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মেহুল চোকসি।

মেহুলের আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল ভারতে প্রত্যর্পণের আর্জি এবং বেলজিয়ামে গ্রেপ্তারি, দুটোর বিরোধিতা করেই আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিজয় বলেন, ‘আমার মক্কেল বিচারপ্রক্রিয়া থেকে মোটেই পালাতে চান না। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে তাঁর। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে চোকসির বিরুদ্ধে।’ সূত্রের খবর, সম্ভবত ভারতে প্রত্যর্পণ এড়াতেই বেলজিয়াম থেকে সুইজারল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করছিলেন মেহুল। তার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন তিনি।

গত মাসেই বেলজিয়ামের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, মেহুল চোকসি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী প্রীতি চোকসি বেলজিয়ামের নাগরিক। সেই সূত্র ধরেই বেলজিয়ামে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন চোকসি। তারপরেই পলাতক ব্যবসায়ীর প্রত্যর্পণের জন্য কোমর বেঁধে নামে ভারত। শনিবার অবশেষে গ্রেপ্তার করা হল ঋণখেলাপি হিরে ব্যবসায়ীকে।

সিবিআই ও ইডি, দুই তদন্তকারী সংস্থার ওয়ান্টেড লিস্টে ছিলেন মেহুল চোকসি। তাঁর বিরুদ্ধে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতারণায় তাঁর ভাইপো নীরব মোদীও অভিযুক্ত। বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন নীরব। তাঁকেও ভারতে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করেছে সরকার।

প্রসঙ্গত, মেহুল চোকসি ও নীরব মোদী পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছিলেন। মুম্বইয়ের ব্রাডি হাউস ব্রাঞ্চ থেকে ভুয়ো লেটার অব আন্ডারটেকিং ও ফরেন লেটার অব ক্রেডিট দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চোকসি ও নীরব দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর কয়েক সপ্তাহ পরে প্রকাশ্যে আসে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কের এই বিপুল আর্থিক প্রতারণার বিষয়টি। ততক্ষণে অবশ্য দুজনেই নাগালের বাইরে চলে গিয়েছেন।

সিবিআই, ইডি, ইমিগ্রেশন সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তাঁরা দেশ ছাড়েন, সেই প্রশ্নে তোলপাড় হয় দেশের রাজনীতি। মেহুলের নামে দেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি ছিল। চোকসির আইনজীবীদের দাবি, তিনি ভারতের কঠোর আইনি প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে দেশ ছাড়েন। তাঁর স্বর্ণালঙ্কার সংস্থা গীতাঞ্জলির দেশে চার হাজারের বেশি শাখা আছে। সেই ব্যবসা আগের মতোই চলছে।

পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আর্থিক জালিয়াতির মামলায় মেহুলের সংস্থা ও ব্যাঙ্কের ৬ জন করে কর্মকর্তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা জেলে আছেন। প্রতারণার টাকা মেটাতে মেহুলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে জানিয়েছিলেন, মেহুল চোকসির ২২ হাজার ২৮০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রতারণার টাকা মেটানোর জন্য তা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে।