রবিবার নিজের দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি জানিয়েছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নয়, মানুষকে সেবা করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। জাতির উদ্দেশে প্রথমবার ভাষণ দিয়ে তিনি বলেছেন যুবদের এই আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের শহিদ-এর মর্যাদা দেওয়া হবে।
তাঁর কথায়, ‘জেন জি বিদ্রোহে নিহতদের শহিদ ঘোষণা করা হবে।’ পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘ হিংসায় যাঁরা মদত দিয়েছেন, তাঁদের ছাড়া হবে না।’ তাঁর ক্ষমতায় থাকার সময়সীমাও জানিয়ে দিয়েছেন সুশীলা কারকি। জানিয়েছেন, সময় পেরিয়ে গেলে মানুষের সমর্থন ছাড়া তিনি ক্ষমতায় থাকবেন না। সুশীলা বলেছেন, ‘ আমি এবং আমার সহযোগীরা ক্ষমতার স্বাদ নিতে আসিনি। আমরা ৬ মাসের বেশি থাকব না। নতুন সংসদ গঠন হলেই দায়িত্ব হস্তান্তর করব। তাই আপনাদের সমর্থন ছাড়া আমরা সফল হব না।’ রবিবার মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ করার কথা রয়েছে সুশীলা কারকির।
Advertisement
নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। কাঠমাণ্ডুর সিংহ দরবার হল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হলেও গণবিক্ষোভের জেরে তার বেশিরভাগ অংশ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দপ্তরকেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর করা হয়েছে। সেই দপ্তরে বসেই রবিবার সুশীলা কারকি বলেন, ‘ দেশে অর্থনৈতিক সমতা এবং দুর্নীতি নির্মূলের দাবিতে এই প্রথম এক টানা সাতাশ ঘণ্টা আন্দোলন হয়েছে। এই বিদ্রোহে নিহতদের আমরা শহিদ ঘোষণা করছি। কিন্তু হিংসায় যাঁরা মদত দিয়েছেন, ভাঙচুর-লুটপাট করেছেন – তাঁদের কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। আইন মাফিক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ এই আন্দোলনে বহু স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছেন। এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। শহিদ পরিবারগুলিকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায্য প্রদান করা হবে। একইসঙ্গে আহতদেরও পাশে থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার।’
Advertisement
সুশীলা কারকি নেপালে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা, হিংসা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, প্রতিবাদের ছদ্মবেশে ৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু এবং সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির উপর হামলা একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। জাতির উদ্দেশে ভাষণে কারকি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িঘর ও সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা ও জ্বালিয়ে দেওয়া সাধারণ তরুণ বিক্ষোভকারীদের কাজ হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, হিংসায় জড়িত বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধরনের অরাজকতা কখনই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
অগ্রগতির ক্ষেত্রে দেশ গভীর আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে, মন্তব্য করেছেন কারকি। তাঁর কথায়, ‘নেপাল পুনর্নির্মাণের জন্য সমস্ত অংশীদারদের অবশ্যই একত্রিত হতে হবে। আমরা হাল ছেড়ে দেব না। আমরা আমাদের জাতির পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করব। আমাদের জেনারেল জেড প্রজন্মের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
গত ৮ সেপ্টেম্বর, কাঠমান্ডুতে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। সমাজ মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার পরই ক্ষোভের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও বৈষম্যের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপাল। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে, পরিণতিতে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হন। এর একদিন পর প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি তাঁর কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল সরকারকে উৎখাত করে পদত্যাগ করেন।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার রাতে নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন সুশীলা কারকি। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নিয়োগে সম্মিলিত অনুমোদন দেয় দেশের বিক্ষোভকারী তরুণ প্রজন্ম। সুশীলা তাঁর সমর্থনে ১ হাজার লিখিত স্বাক্ষর দাবি করলে স্বাক্ষর মেলে আড়াই হাজারেরও বেশি। পরের দিন সে দেশের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন এবং ঘোষণা করেন যে আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপাতত ৬ মাস দেশের সরকার চালাবেন সুশীলা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুশীলা কারকি-কে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর নিয়োগকে ‘নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। কাঠমান্ডুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠলেও কর্তৃপক্ষ কার্ফু ও বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর দোকান, বাজার এবং শপিংমলগুলি আবার খোলা হয়েছে, ব্যস্ত রাস্তাগুলিতেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে।
Advertisement



