বিসিজি ভ্যাকসিন না নেওয়ার কারণেই কি ইতালি-আমেরিকায় ভয়ঙ্কর হয়েছে করোনাভাইরাস?

যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস প্রতিরোধে শিশুবয়সে বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। গবেষকদের ধারণা, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই বিসিজি কার্যকর অস্ত্র হতে পারে।

Written by SNS New Delhi | April 1, 2020 6:51 pm

বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। (Photo: IANS)

ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গেরিন বা বিসিজি ভ্যাকসিনের সঙ্গে কি করোনায় মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক আছে? গবেষকরা কিন্তু সে সম্ভানা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না। চারপাশে করোনার প্রকোপ ও মৃত্যুর হার নিয়ে কাটাছেড়া করতে বসে তাঁদের মনে হয়েছে, বিসিজি ভ্যাকসিন একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস প্রতিরোধে শিশুবয়সে বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। গবেষকদের ধারণা, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই বিসিজি কার্যকর অস্ত্র হতে পারে। এই বিসিজি বহু পুরনো ভ্যাকসিন। এখনও বিশ্বের বহু দেশে এই ভ্যাকসিনটি চালু রয়েছে।

ছোটদের যক্ষ্মা ছাড়াও ম্যানিনজাইটিসের হাত থেকে সুরক্ষা দেয় এই প্রতিষেধকটি। শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণের হাত থেকেও এটি বাঁচায়। গবেষণা বলছে, এই বিসিজি ভ্যাকসিন নিয়ে দেশগুলির জাতীয় নীতির সঙ্গে কোভিড ১৯ ও মৃত্যুহারের সম্পর্ক রয়েছে।

নিউ ইয়র্কের ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কলেজ অফ অস্টিয়োপ্যাথিক মেডিসিনের তরফে এই গবেষণাটি চালানো হয়। গবেষক দলের পর্যবেক্ষণ, ইতালি, নেদারল্যান্ড, আমেরিকার মতো যে দেশগুলিতে বিসিজি ভ্যাকসিনের সর্বজনীন নীতি নেই, তারাই করোনায় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে যে দেশগুলিতে এই ভ্যাকসিনটি সর্বজনীন, এবং দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে, তারা তুলনায় নিরাপদ। কোভিড ১৯’এর ভয়াবহতা সেই তুলনায় কম।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রমণের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছড়িয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৮জন। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৬৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮৫ জনের।

আর একটি দেশ ইতালিতে আক্রান্ত ১ লক্ষ ১৭৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫৯১ জনের। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গিয়েছেন ৮১২ জন।

আবার ইরানের মতো দেশে বিসিজি ভ্যাকসিন অনেক পরে সর্বজনীন করা হয়। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে করোনায় মৃত্যু বেশি। যদিও, বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের এই ভ্যাকসিনটি নেওয়া রয়েছে, তাঁরা কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারছেন।

একটি তুলনাও টেনেছেন গবেষকরা। ইরানে ১৯৮৪ সাল থেকে যক্ষ্মার এই ভ্যাকসিনটি সর্বজনীন করা হয়। জাপানে ১৯৪৭ সাল থেকে বিসিজি সর্বজনীন করা হয়। তাই ইরানে করোনায় মৃত্যু হার যখন ১৯.৭ , জাপানে তখন ০.২৮। আবার ব্রাজিলে এই ভ্যাকসিনটি ১৯২০ সাল থেকেই সর্বজনীন। সেখানে মৃত্যুহার ০.০৫৭৩। এই হার প্রতি মিলিয়ন বা প্রতি ১০ লক্ষ বাসিন্দার নিরিখে।

ইরানে সোমবার রাত পর্যন্ত করোনাভাইরাস’এ মৃত্যু হয়েছে ২,৭৫৭ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১১৭ জন। সেখানে জাপানে এখনও পর্যন্ত ৫৪জন মারা গিয়েছে। আক্রান্ত সবমিলিয়ে ১৮৬৬ জন। ৪২৪ জন এর মধ্যেই সেরে উঠেছেন।