রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখায় ভারতের সঙ্গে ‘শুল্ক যুদ্ধ’ শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার জেরেই এবার মার্কিন সামরিক অস্ত্র এবং যুদ্ধ বিমান কেনা স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। এই সিদ্ধান্তকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সঙ্কট বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তকে দুই দেশের সম্পর্কে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় টানাপোড়েনের প্রথম স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে এসব ক্রয় ও যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু দুই দেশের শুল্ক যুদ্ধের ফলে স্থগিত হওয়া এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে জেনারেল ডায়নামিক্সের তৈরি স্ট্রাইকার কমব্যাট ভেহিকল, রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিনের যৌথভাবে তৈরি জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি৮I নজরদারি বিমান ক্রয়— যার প্রস্তাবিত মূল্য ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও আপাতত স্তব্ধ হয়ে গেল। যেমন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও যৌথ সামরিক মহড়া এতদিন বাধাহীনভাবে চলতে থাকলেও, শুল্কের কারণে রাজনৈতিকভাবে মোদীর জন্য রাশিয়া থেকে আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝোঁকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
Advertisement
ভারতের রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পূর্বেই ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু রাশিয়ার থেকে তেল ও সামরিক অস্ত্র কেনার প্রক্রিয়া বন্ধ না করায় ফের অতিরিক্ত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। অর্থাৎ এখন ভারতের রপ্তানিযোগ্য পণ্যে মার্কিন মুলুকে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। তিনি কার্যত ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংঘাত শুরু করে দিয়েছেন। আর সে কারণে ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে দিয়েছে।
Advertisement
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করে কয়েকটি ক্রয় চুক্তি ঘোষণা করার কথা থাকলেও সেই সফর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রয় স্থগিতের কোনও লিখিত নির্দেশ না থাকলেও আপাতত সেই প্রক্রিয়ার কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে সূত্রের খবর, শুল্ক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিক নির্দেশনা স্পষ্ট হলে এই প্রতিরক্ষা ক্রয় আবারও এগোতে পারে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এখনই সে রকম কোনও সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে তার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ফ্রান্স, ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশের দিকেও অস্ত্র কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব রয়েছে ভারতের। সেই কারণে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণে এখনও মস্কোর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। তাই দেশের নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় এবং জাতীয় স্বার্থে কোনও মতেই ট্রাম্পের শর্ত মেনে দীর্ঘদিনের পরম্পরা থেকে পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়।
Advertisement



